দেশজুড়ে

জানেন মৃত্যুঝুঁকি, তবু শতাধিক পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস

বাড়িগুলো এক থেকে দেড়শো বছরের পুরনো। খসে পড়ছে পলেস্তার। ভবন জুড়ে আগাছা জন্মেছে। হালকা বাতাসেই কেঁপে ওঠে জরাজীর্ণ দালানকোঠা। ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে নষ্ট করে দেয় আসবাবপত্র। যে কোনো সময় ভবনগুলো ধসে পড়ে প্রাণহানিসহ ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

Advertisement

কুষ্টিয়া জেলায় এমন শতাধিক পরিত্যক্ত ভবনে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কয়েকশ পরিবার বছরের পর বছর ধরে বসবাস করে আসছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসন অনেক আগেই ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেখানে বসবাস থেকে বিরত থাকার নোটিশও টাঙিয়েছে। কিন্তু তাতেও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌর শহরে এরকম পরিত্যক্ত চরম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা প্রায় ৫২টি। বসবাসের সম্পূর্ণ অনুপযোগী অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজের বাসভবন, মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়িসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও আছে। আছে বিভিন্ন সংগঠনের অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া, আড়ুয়াপাড়া বড় বাজার, থানাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জরাজীর্ণ এসব ভবনে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনগুলোর ছাদে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। সিলিংয়ে বটগাছ জন্মেছে। কোথাও কোথাও ইটের আস্তরণ খসে পড়েছে। যেন ভেঙে পড়ার উপক্রম।

Advertisement

শহরের আমলাপাড়ার উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ভবনটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও আছে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস, আমলাপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অফিস। প্রতিদিন এ ভবনে শত শত লোক যাতায়াত করে। অনেক আগে ভবনটির ছাদের একটি অংশ একবার ধসেও পড়েছিল।

শহরের ২৮ মেছুয়া বাজারের তিন তলাবিশিষ্ট পিয়ার খান আব্দুস সাত্তারের পরিত্যক্ত বাড়িটির একেবারে ভগ্নদশা। স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এ ভবনের নিচতলায় ব্যবসা করে যাচ্ছি। ভবনটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের তাগিদ দিয়েছি। এর আগে জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদনও করা হয়েছে।’

শহরের মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়িটিও খুবই জরাজীর্ণ। যে কোনো সময় ভবন ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার পিসি রায় রোডের কসাইর পরিত্যক্ত বাড়িটিরও একই অবস্থা। এছাড়া শহরের মিলপাড়া এলাকার কুষ্টিয়া বড় স্টেশনের পাশের মহিদ পোলট্রি ফিডের পুরনো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ।

কুষ্টিয়া পৌর শহর ছাড়াও কুমারখালী পৌর এলাকার কুন্ডুপাড়ায় এরকম অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। এছাড়া খোকসা উপজেলায়ও বেশ কিছু অতি প্রাচীন এ ধরনের পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দেখা গেছে।

Advertisement

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী রফিকুল আলম টুকু জাগো নিউজকে বলেন, অনেকে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে আবার কেউ আছে দখল করে বছরের পর বছর প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এসব পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করে আসছে। ভবনগুলো যে অবস্থায় আছে তাতে করে যেকোনো সময় ধসে পড়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনা এমনকি প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এসব ভবন চিহ্নিত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

কুষ্টিয়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পুরনো বেশকিছু ভবন এই জেলায় আছে। এসব ভবনে দীর্ঘ দিন ধরে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মানুষজন বসবাস করে আসছে। কিন্তু নানা জটিলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনগুলো অপসারণ করা যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এসব ভবন অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে কেউ যাতে বসবাস না করে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও মানুষ পরিত্যক্ত এসব ভবনে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে।

এসজে/এমএস