সাহিত্য

পাগড়ি ও শেরওয়ানির গল্প

সুমন ইসলাম

Advertisement

আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন মুছা ভাই।আমি অবশ্য স্বাভাবিক আছি। মুখে হাসি ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে ভাইয়া?’ ‘এটা কী গায়ে দিলা? পাগড়ি আর শেরওয়ানি কই?’ ‘ওহ, দোকান থেকে আনা হয়নি। ভেবে দেখলাম, দরকার কী! এখন তো আকদ হচ্ছে। অনুষ্ঠানের দিন শহর থেকে ভাড়া নিয়ে আসবো। এই বেলা পাঞ্জাবি দিয়ে চালিয়ে নিই।’ বাপ রে! এমন একটা হুংকার দিলেন। আমি বিছানা থেকে পড়ে গেলাম। উফ! স্বপ্ন দেখছিলাম।

সকালে উঠেই ভাবছি, কোথা থেকে ভাড়া নেওয়া যায়? আবার চিন্তাও করছি, আকদে পাগড়ি-শেরওয়ানি পরলে অনুষ্ঠানের দিন পানসে হয়ে যাবে। মুছা ভাইয়াকে হাওয়া-টাওয়া দিয়ে বোঝালাম। অনুষ্ঠানের দিন ফেনী শহর থেকেই সবচেয়ে সুন্দরটা নিয়ে আসবো। যাক, মনে হয় বুঝলো; আর ঘাটালো না।

সুন্দর দেখে একটি পাঞ্জাবি আর নতুন টুপি পরে আকদের কাজটা শেষ করলাম। পাগড়ি-শেরওয়ানির ঝামেলায় জড়াতে হলো না।

Advertisement

কেটে যায় বসন্তের দিন। বউ তার বাপের বাড়ি, যাই ছুটি পেলে। পরিকল্পনা, টাকা-পয়সা কিছু হলে সুন্দর একটা সময় দেখে ঘরে তুলে আনবো। বছর দুয়েক লাগলেও লাগুক। ইউটিউব থেকে সহজ জীবন-যাপন শেখার ভিডিও দেখে ম্যান প্রপোজ, গড ডিসপোজ হয়ে গেছে।

বউ তাগাদা দেয়, আগামী এক মাসের মধ্যে তাকে ঘরে তুলে নিতে। হাতে নেই তেমন টাকা-পয়সা। আকদের সময় করা কর্জ এখনো কাঁধে। আবার এদিক-সেদিক থেকে টাকা ধার করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সংক্ষিপ্ত আয়োজনের দিকে এগোচ্ছি। লিস্ট করে কোন আইটেম কোথা থেকে সংগ্রহ করবো, তার তোড়জোড় চলছে। বাদ যায়নি পাগড়ি-শেরওয়ানিও।

গায়ে-হলুদের রাতে মুছা ভাইয়া দেখতে চাইলেন। আনা হয়নি তখনো। চিন্তায় পড়ে গেলাম। বললাম, ‘কাল কৃষ্ণ মজুমদার হাট থেকে নিয়ে নেবো। পাওয়া যায় তো ফারুক ভাইর দোকানে।’ শান্ত হলো বেচারা।

দুপুর দুইটার দিকে দলবল নিয়ে বউ আনতে রওনা দিলাম। মুছা ভাইয়াকে আগেই পাঠিয়ে দেই। পৌঁছে দেখি এক কোণে পান চিবুচ্ছেন। আমাকে দেখে রাগে গরগর করতে লাগলেন। পাশের লোকজন ভাবছে, এইটুকু পথ দেরিতে এলাম কেন? তাই বোধহয়। আর আমি ভাবছি, মুছা ভাইয়া কী ভাবেন তা। হয়তো ভাবছেন, পাগড়ি-শেরওয়ানি ছাড়া একটা বিয়ে কী করে হতে পারে!

Advertisement

এসইউ/এমএস