সাহিত্য

হরিষে বিষাদ

মেহনাজ মীম

Advertisement

চৌধুরী ভিলা বাহারি ফুল আর আলোকসজ্জায় সেজেছে। কারণ আজ শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি আসিফ চৌধুরীর আদরের মেয়ে ইচ্ছের বিয়ে। তিন ছেলের পর মেয়ের জন্ম। তাই ছোট থেকেই ইচ্ছের সব আবদার তারা পূরণ করেছেন।

প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে মেয়ের পছন্দের ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দিচ্ছেন। কাছের-দূরের আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষীরা আজ আমন্ত্রিত। পাঁচ বছরের প্রণয় পরিণয়ে রূপান্তরিত হওয়ার আনন্দে বধূবেশী ইচ্ছে আজ বাঁধনহারা খুশি।

কলেজ থেকে পরিচয় অয়নের সঙ্গে। তাদের দীর্ঘ প্রেমে কত ঘটনা, কত স্মৃতি! অনেক কষ্টে পরিবারকে রাজি করিয়ে অবশেষে আজকে অয়নের সঙ্গে বিয়ের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে। এসব ভেবে অজান্তেই আনন্দ অশ্রু জমলো চোখে।

Advertisement

হঠাৎ ‘বর এসেছে’ চিৎকারে ঘোর কাটে ইচ্ছের। অশ্রু মুছে মৃদু হাসি দেয়। বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সমাগমে পুরো বাড়ি মুখরিত। প্রাথমিক আপ্যায়ন শেষে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। কাজি সাহেব লোকজনসহ প্রবেশ করেন ইচ্ছের ঘরে। সব নিয়ম-কানুন সম্পন্ন করে ইচ্ছেকে কাবিননামা এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘মা জননী স্বাক্ষর দেন’।

খুশি মনে কলম ধরেও স্বাক্ষর করতে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে থমকে যায় ইচ্ছে। মনে পড়ে বাবা-মা, ভাইদের সঙ্গে সব মধুর স্মৃতি। আজ আপনজনদের ছেড়ে ইচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে নতুন এক জীবন শুরু করতে চলেছে। তবুও সেই আনন্দকে ছাপিয়ে পরিবার ছেড়ে যাওয়ার এক তীব্র কষ্ট অনুভূত হচ্ছে হৃদয়ে।

অজান্তেই ক’ফোটা তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। অবাক হলো ইচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই অয়নকে পাওয়ার আনন্দের অশ্রু আর এখন নিজের পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদের অশ্রু, দুটোই সত্যি! এটাই তো জীবন, কিছু হারিয়ে কিছু পাওয়া। ইচ্ছে তাকিয়ে দেখলো তার মা, ভাই আর বাবার চোখেও পানি। ভাবলো, যে বাবার হাত ধরে হাঁটা শিখেছি। আজ সেই বাবা আমাকে তুলে দেবেন অন্যের হাতে। কী নিষ্ঠুর নিয়ম পৃথিবীর!

কাজি সাহেবের তাগিদে নিজেকে সংবরণ করে স্বাক্ষর করলো ইচ্ছে। কিন্তু স্বাক্ষরের পাশে পড়ে থাকা দু’ফোটা অশ্রুজল একদিকে অয়নের সঙ্গে সংসার শুরু হওয়ার আনন্দের আবার একই সঙ্গে নিজের চেনা বলয় পরিবর্তনের বিষাদের চিহ্ন। সানাইয়ের সুরেও যেন সেই বিষাদ অনুরণিত হতে লাগলো।

Advertisement

এসইউ/এমএস