বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনস ছাড়া অন্য কোনো বিমানে হজযাত্রী যাওয়ার সুযোগ না রাখা ও হজযাত্রীদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেশি ভাড়া নেওয়ার ঘটনাকে ‘অমানবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়কে একটি ‘অথর্ব মন্ত্রণালয়’ বলে মূল্যায়ন করেছেন আদালত। এ সময় হজের খরচ বাড়ার বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
Advertisement
‘হজ প্যাকেজ ২০২৩’ সংশোধন করে খরচ পুনরায় নির্ধারণে করা রিটের শুনানির দিন ধার্য করার সময় মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। বুধবার (১৫ মার্চ) এ বিষয়ে শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মোহাম্মদ মহসিন। একইসঙ্গে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান। এছাড়া অ্যাডভোকেট আবিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আজগর হোসেন তুহিন, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসাইন মজুমদার। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আওলাদ হোসেন।
আরও পড়ুন>> হজের খরচ কমানোর সুযোগ নেই: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
Advertisement
এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে হজ প্যাকেজের বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, খোঁজ নিতে বলেছেন। এর আগে গত ৬ মার্চ হজ প্যাকেজ সংশোধন করে খরচ কমিয়ে নির্ধারণ করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল-কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ-জামান ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ নোটিশ পাঠান। নোটিশের পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তিনি গত ১২ মার্চ রিট আবেদন করেন।
হাইকোর্ট বলেছেন, ‘এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজে যাবে? বিশ্বের অন্যান্য দেশে হজের জন্য সরকার আলাদা বরাদ্দ রাখে, আমাদের এটি নেই কেন? বিশ্বের অন্যান্য দেশে হজের জন্য সরকার আলাদা বাজেট রাখে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি নেই। হজের প্যাকেজ মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় আমরা হজে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর গরিব মানুষরা কীভাবে যাবে?’
আরও পড়ুন>> হজ প্যাকেজ ঘোষণা, এবার জনপ্রতি খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা
Advertisement
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে করা এক রিটের শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য বুধবার (১৫ মার্চ) দিন রেখেছেন।
এ বিষয়ে মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ‘হজের প্যাকেজ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে নির্ধারণ করা হয়, যা রিটে উল্লেখ করা হয়নি। এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার বিষয়। বিষয়গুলো রিটে উল্লেখ না থাকায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানতে হবে, যে কারণে সময় চাওয়া হয়। আদালতও বলেছেন এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। মন্ত্রণালয় থেকে ওই সব তথ্য সংগ্রহ করতে মৌলিকভাবে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে আদালত আগামীকাল পরবর্তী শুনানির জন্য রেখেছেন।’
এর আগে গত ১২ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট করা হয়। রিটে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যে কোনো এয়ারলাইনসে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: হজ ব্যবস্থাপনায় খরচ কমাতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিগ্যাল নোটিশ
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান জনস্বার্থে এ রিট করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। ঘোষিত হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়ে চার লাখ টাকা নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আইনজীবী।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় এক স্মারকে ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩’ ঘোষণা করে। তাতে হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর এ খরচ কমিয়ে চার লাখ টাকার মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানিয়ে ৬ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয় বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান।
আরও পড়ুন: কোন দেশ থেকে হজে যেতে খরচ কত?
নোটিশে ওই স্মারক সংশোধন বা পরিবর্তন করে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ সাতদিনের মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানানো হয়। এতে ব্যর্থ হলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এতে কোনো সাড়া না পেয়ে ১২ মার্চ রিট করা হয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ হতে পারে। এ উপলক্ষে গত মাসে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় হজ চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ করতে যেতে পারবেন। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ ব্যক্তি পবিত্র হজে যেতে পারবেন।
এফএইচ/এএএইচ/এমএস