ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় ছিলেন তিনজন। একজনের নাম আকাশ, অন্যজন হলেন সোহেল রানা। অপরজনের নাম জানা যায়নি। এরমধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী আকাশকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আর সোহেল রানা পলাতক। তিনি ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে এক সময় গাড়ি চালাতেন।
Advertisement
ডিবি জানায়, ছিনতাইয়ের মূল ছক সাজান আকাশ ও সোহেল রানা। সোহেল রানা আবার মানি প্ল্যান্ট লিংকের টাকা নেওয়ার খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতেন। ফলে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই সেদিন তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর ছিনতাই করা টাকার একটি বড় অংশ নিয়ে পালিয়ে যান সোহেল রানা। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: তিনজন গানম্যান দিয়ে ৭ ব্যাংকে সেবা দেয় মানি প্ল্যান্ট লিংক
এদিকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। আর সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৭ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সবশেষ ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
আরও পড়ুন: তিন বক্স টাকা উদ্ধার, সিকিউরিটি কোম্পানির দুই পরিচালকসহ আটক ৭
তিনি বলেন, আমাদের একাধিক ডিবি টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। গতরাতে রাজধানীর গুলশান কড়াইল বস্তির বউবাজার থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার নাম হৃদয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সকালে নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে মিলন নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে পাওয়া যায় ১০ লাখ টাকা। এ দুজনই পেশাদার ছিনতাইকারী।
গ্রেফতার হৃদয়
Advertisement
ডিবিপ্রধান বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় ডাকাত দলে ১০-১২ জন ছিলেন। যখন মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের গাড়ি থেকে ট্রাংকগুলো নিয়ে ডাকাতদের ভাড়া করা হাইসে তোলা হয়, তখন একজন উঠতে না পেরে দৌড়াতে থাকেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার নামই আকাশ। তিনি মূল মাস্টারমাইন্ড।
হারুন অর রশীদ বলেন, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজন মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এদের মধ্যে একজন আকাশ, আরেকজন সোহেল রানা ও আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: মূল মাস্টারমাইন্ড গ্রেফতার, আরও ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধার
গ্রেফতার বাকি আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে হারুন বলেন, আমরা বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। তারা জানিয়েছে, এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় কয়েক স্তরে বিভিন্নজনের আলাদা দায়িত্ব ছিল। কেউ ছিলেন পরিকল্পনাকারী, কেউ ছিলেন মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ ছিলেন কামলা ও কামলা সংগ্রহকারী।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে সংগ্রহ করা হয়। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ করে যার যার মতো বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যান। আর বেশকিছু টাকা খরচ করেন বিভিন্ন খাতে। ফলে জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারে কিছুটা বিলম্ব হয়।
আরও পড়ুন: ডাকাতরা চালের বস্তা ও বাজারের ব্যাগে নেয় দুই ট্রাংকের টাকা
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, এ ঘটনায় মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের সবাইকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে আরও কেউ জড়িত কি না বা মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের কেউ জড়িত ছিলেন কি না তা জানা যাবে।
৯ মার্চ রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র একটি চক্র মানি প্ল্যান্ট লিংকের গাড়ি ঘিরে ধরে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। গাড়িটি বুথে টাকা ঢোকাতে ঢাকা থেকে সাভার ইপিজেড যাচ্ছিল।
টিটি/জেডএইচ/এমএস