জাতীয়

রপ্তানির আড়ালে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার

রপ্তানির আড়ালে দেশের চারটি প্রতিষ্ঠান ৩৮২ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এই চার প্রতিষ্ঠান হলো- এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ও ইলহাম।

Advertisement

এই প্রতিষ্ঠানগুলো জাল নথি তৈরি করে এক হাজার ৭৮০টি চালানের বিপরীতে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার করে। এরমধ্যে এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন পাচার করেছে ২৮২ কোটি টাকা, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ৬২ কোটি টাকা, ইলহাম ১৭ কোটি টাকা এবং ২১ কোটি টাকা পাচার করেছে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন।

আরও পড়ুন: ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক ফখরুল আলম।

Advertisement

জানা যায়, রপ্তানি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করছে, কিন্তু পণ্যের মূল্য (বৈদেশিক মুদ্রা) দেশে প্রত্যাবাসিত হচ্ছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ৩১ জানুয়ারি উত্তর পতেঙ্গা ডিপোয় অভিযান চালায়। এতে প্রমাণ মেলে জালিয়াতির।

এরই ধারাবাহিকতায় সাতটি কন্টেইনারে রাখা ৯টি পণ্যের চালানের কায়িক পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ঘোষণাবহির্ভূত একাধিক পণ্য পাওয়া যায়। ঘোষণা মোতাবেক টি-শার্ট এবং লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও কায়িক পরীক্ষায় বেবি ড্রেস, জিনস প্যান্ট, লেগিন্স, শার্ট ও শালসহ ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য মেলে। অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ফখরুল আলম

আরও পড়ুন: টাকা পাচার করে এখন ঋণের জন্য আইএমএফের পা ধরাধরি চলছে: নুর

Advertisement

তদন্তে দেখা যায়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানটি বিগত সময়ে ৮৬টি পণ্য রপ্তানি করে। রপ্তানি করা পণ্য চালানগুলোতে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন ১৯৭ টন মেনস ট্রাউজার, টি-শার্ট, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি রপ্তানি করে। যার মূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা। চালানগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করা হয়।

কাস্টমসের গোয়েন্দারা জানান, এস্যাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ইএক্সপি যাচাই এবং অগ্রণী ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বর্ণিত ৮৬টি বিল অব এক্সপোর্টে থাকা ইএক্সপিগুলো ভিন্ন ভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইস্যু করা। যেহেতু একটি ইএক্সপি একাধিক বিল অব এক্সপোর্টে ব্যবহারের সুযোগ নেই, সেহেতু ৮৬টি বিল অব এক্সপোর্টে ভিন্ন ভিন্ন রপ্তানিকারকের ইএক্সপি ব্যবহার করা হলেও, বিল অব এক্সপোর্টের ফিল্ড ২৪ এ কোড ২০ ব্যবহার করার কারণে ইএক্সপি এবং সংশ্লিষ্ট বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানিকারকের বিন অটো ম্যাচ হয়নি। এক্ষেত্রে ইএক্সপির কার্যকারিতা নেই। ফলে বৈধপন্থায় ২১ কোটি টাকা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন: আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার, জড়িত শতাধিক ব্যক্তি : দুদক

একইভাবে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য রপ্তানিকারকের ইএক্সপি ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি করেছে। এ কারণে এই চালানগুলোর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বৈধপন্থায় দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ না থাকায় মানিলন্ডারিং হয়েছে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, এক হাজার ৭৮০টি চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন, যার ঘোষিত মূল্য ৩৮২ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ‘লিমাক্স শিপার্স লিমিটেডে’র সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম করে। অন্য প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করায় এ জাতীয় ইএক্সপির কোনো প্রকার কার্যকারিতা না থাকায় বৈধপন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই, অর্থাৎ এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং হয়েছে। ওই চার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এমন কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে।

এসএম/জেডএইচ/জিকেএস