দেশজুড়ে

ঈশ্বরদীর কুঁচিয়া যাচ্ছে বিদেশে

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের অন্যতম পেশা কুঁচিয়া শিকার। এসব কুঁচিয়া বেচাকেনার জন্য উপজেলার কালিকাপুর বাজারে গড়ে উঠেছে একটি আড়ত। সেখান থেকে সপ্তাহে দুদিন ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা থেকে চীন, থাইল্যান্ড, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় এ কুঁচিয়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুঁচিয়া শিকারি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের প্রধান পেশা ছিল পশু শিকার। পাশাপাশি তারা ভুট্টার চাষ করতেন। ভুট্টার ভাত, বুনো শূকর ও খরগোশের মাংস ছিল তাদের নিত্যদিনের খাবার। বন-জঙ্গলে এসব প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় পশু শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার তাগিদে সবাই পেশা বদল করেছেন। কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ এখন তাদের প্রধান পেশা। পাশাপাশি কুঁচিয়া ও কচ্ছপ শিকার করে এদের অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: ধারদেনায় চলছে সংসার, খাদ্যতালিকা থেকে বাদ মাছ-মাংস

জলাশয়ে কচ্ছপও খুব একটা না থাকায় এটিও এখন বিলুপ্তির পথে। এখন শুধু কুঁচিয়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৫-৪০টি পরিবার। অন্য পরিবারগুলো সবাই কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল।

আঞ্চলিকতা ভেদে কুঁচিয়া ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। কুঁচে, কুইচ্ছা, কুঁচে বাইম, কুঁচিয়া ও কঁচুয়া নামের পাশাপাশি ‘কুঁচি মাছ’ নামেও এদের অনেকেই চেনেন। তবে এটি একটি ইল-প্রজাতির মাছ। সাপের মতো দেখতে এ মাছ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য অনেকে কুঁচিয়া খান। একটি কুঁচিয়ার সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। একজন শিকারি দিনে দুই থেকে আট কেজি পর্যন্ত কুঁচিয়া শিকার করতে পারেন। নভেম্বর থেকে জুন কুঁচিয়া ধরার উপযুক্ত মৌসুম।

Advertisement

মারমী গ্রামের দিলীপ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘১০ বছর কুঁচিয়া শিকার করছি। আগে নিজেরা খাওয়ার জন্য ধরতাম। এখন এটা পেশা হয়ে গেছে। কপাল ভালো হলে কোনো কোনো দিন ৭-৮ কেজি পর্যন্ত কুঁচিয়া ধরতে পারি।’

আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও কাপ্তাই হ্রদে মিলছে না মাছ

তিনি বলেন, ‘কুঁচিয়ার বাজারদর সব সময় এক থাকে না। প্রতি কেজি ১৬০-২০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। করোনার আগে ২৫০ টাকা কেজি ছিল। এখন ২০০ টাকার বেশি দাম পাওয়া যায় না।’

কুঁচিয়া শিকারি জ্যাকব বিশ্বাস বলেন, ‘বাপ-দাদারা বুনো শূকর, খরগোশ, বনবিড়াল, কচ্ছপ শিকার করতো। এখন জঙ্গল নাই। এসব শিকারও করতে পারি না। এখন শুধু কুঁচিয়া মাছ শিকার করি। তবে যেভাবে কারেন্ট জালের ব্যবহার বেড়েছে তাতে এটাও হয়তো একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাচ্চা কুঁচিয়া কারেন্ট জালে আটকে মারা যাচ্ছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘বছরে ৭-৮ মাস কুঁচিয়া শিকার করা যায়। অন্য চারমাস বসে কাটাতে হয়। অথবা কোনো কাজ খুঁজে নিতে হয়। কুঁচিয়া শিকার করে কোনোরকমে দিন কেটে যাচ্ছে। মাসে গড়ে ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয়।’

আরও পড়ুন: ৫২ দেশে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের মাছ: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

কথা হয় কুঁচিয়ার আড়তদার বার্নাট দাসের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমিও একসময় কুঁচিয়া শিকারি ছিলাম। পরে নিজেই আড়ত দিয়েছি। এখানে ৩০-৩৫ জন শিকারি আছেন। তারা মাসে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ কেজি কুঁচিয়া শিকার করতে পারেন। এসব কুঁচিয়া ঢাকার উত্তরায় চলে যায়। সেখান থেকে চীন, থাইল্যান্ড, ভারত ও জাপানে রপ্তানি করা হয়।’ এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, কুঁচিয়া শিকারিরা এখন পর্যন্ত মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করেননি। বাণিজ্যিকভাবে চাষের বিষয়টিও তাদের কেউ জানাননি। কেউ এ বিষয়ে আগ্রহী হলে তাকে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সহযোগিতা করা হবে।

ঢাকার উত্তরার ইনারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়ারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈশ্বরদী থেকে বার্নাট দাস নামের একজন আমাদের আড়তে কুঁচিয়া পাঠান। তার মতো আরও অনেকের সঙ্গে আমাদের কুঁচিয়া মাছের ব্যবসা রয়েছে। এসব কুঁচিয়া মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় চীন, জাপান ও থাইল্যান্ড রপ্তানি হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।

এসআর/জিকেএস