ফিচার

উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি

প্রাকৃতিক সোন্দর্যে ঘেরা অপরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবটুকু অংশ জুড়ে রয়েছে প্রকৃতির সাথে মানব জীবনের সংমিশ্রণ। এখানে আছে চল্লিশোর্ধ বছরের পুরনো গাছগাছলি,জলাশয়,লাল ইটের দালান,পাখি,প্রজাপতি আরো নানা প্রাকৃতিক জীবজন্তু। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পাখি আর প্রজাপতি। প্রতি বছর পাখি ও প্রজাপতির মেলার আয়োজন করা হয় এখানে।কৃত্রিম উপায়ে প্রজাপতির বংশবৃদ্ধি এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির পর উন্মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রজাতির সংরক্ষণ সহজ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রজাপতির জন্য নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ,কিছু কাজ বাস্তবায়ন করাও হয়েছে।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গবেষক মনোয়ার হোসেনের গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোট্যানিকাল গার্ডেনে প্রজাপতির হাটঘর। যার মধ্য দিয়ে প্রজাপতির প্রতিপালন, নিরাপদ বংশবৃদ্ধি ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণ করা হবে। এখানে কৃত্রিম উপায়ে প্রজাপতির খাবার তৈরির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়াও প্রজাপতি বসে এমন ধরণের প্রায় ২০০ শতাধিক বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোট্যানিকাল গার্ডেনে। পাশাপাশি গাছের সাথে তাদের বাংলা ও ইংরেজি নামের প্লেট ও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। ৩০০ একরের এই জায়গার নামকরণ করা হয়েছে ‘‘বাটারফ্লাই হাউজ’’।বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন ‘‘বাটারফ্লাই বিডিং সেন্টার অ্যান্ড পার্ক’’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া গবেষণা কেন্দ্রের পাশে নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে নির্মিত হবে এ বাটারফ্লাই বিডিং সেন্টার অ্যান্ড পার্ক। এ পার্ক প্রতিষ্ঠিত হলে এখানে থাকবে প্রজাপতির মিউজিয়াম, রিসার্চ সেন্টার, প্রজাপতির বিডিং নেট হাউস ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা।শিশুদেরকে প্রকৃতিপ্রেমী ও প্রজাপতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য জাহাঙ্গীরনগর অধ্যাপক মনোয়ার হোসেনের বন্ধু কবি খালেদ হোসাইনকে সঙ্গে নিয়ে ২০১২ সালে শিশু-কিশোরদের জন্য `ছন্দে ছড়ায় প্রজাপতি` শিরোনামে চমৎকার একটি বই লেখেন। বইটিতে রয়েছে ৪০টি প্রজাপতির রঙিন ছবি, প্রতিটি প্রজাপতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও তাদের নিয়ে একটি করে ছড়া। বইটিতে প্রজাপতির ছবি ও বিজ্ঞানভিত্তিক বর্ণনা দিয়েছেন অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন নিজেই আর প্রজাপতিকে নিয়ে মজার মজার ছড়াগুলো লিখেছেন কবি অধ্যাপক খালেদ হোসাইন।‘‘হলুদ রঙের প্রজাপতি চলে এঁকে বেঁকে, আমরা সবাই হা হয়ে যাই রূপের ঝলক দেখে’’ এ রকম অসাধারণ ছন্দের মাধ্যমে বাস্তব প্রজাপতির চিত্রায়িত করেছেন মনের মাঝে।২০১০ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেনের প্রচেষ্টায় ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হচ্ছে প্রজাপতি মেলার। গত ৫ ডিসেম্বর শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে `প্রজাপতি মেলা-২০১৪`। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’’। এবারের প্রজাপতি মেলায় আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. সোহরাব আলীকে। প্রজাপতির ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহ এবং প্রজাপতির বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য ‘‘ইয়ং বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড’’ পান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানভীর আহমেদ।বিভিন্ন প্রজাতির প্রদর্শন ছাড়াও দিনব্যাপী এ মেলায় আরো ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি আদলের ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Advertisement