দেশজুড়ে

প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই টাকা উত্তোলন

নেত্রকোনার মদন উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোনোরকম পাম্প বসালেও হয়নি বাকি কাজ। মাসের পর মাস অফিসে ঘুরেও সমাধান পাচ্ছেন না সুবিধাভোগীরা। তবে কাগজে-কলমে কাজ ঠিকঠাক দেখিয়ে তোলা হয়েছে প্রকল্পের টাকা।

Advertisement

মদন উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে নিরাপদর পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় জেলার মদন উপজেলায় ২০৮টি আর্সেনিকমুক্ত সাবমারসিবল পাম্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব নলকূপ স্থাপনের জন্য সৌরভ, হান্নান ও মেসার্স আনোয়ারুল হক নামে তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৭০টি পাম্প স্থাপনের দায়িত্ব পায় মেসার্স আনোয়ারুল হক। তবে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাম্পগুলো স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর সঙ্গে বাকি দুই ঠিকাদারের স্থাপন করা নলকূপের সুবিধাভোগীদের তথ্য দীর্ঘদিন উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ে ঘুরে পাওয়া যায়নি।

নিয়মানুযায়ী, প্রান্তিক পর্যায়ে কয়েকটি অসহায় পরিবার ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ফি বাবদ ১০ হাজার ৩৫ টাকা জমা দিয়ে সুবিধাভোগীর আওতায় আসে। পরে সুবিধাভোগীদের নির্ধারণ করা স্থানে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে ঠিকাদার। পাম্প স্থাপনের পর ওই স্থানে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার একটি পাকা হাউজে পানির ট্যাংক বসাতে হবে। আবার নিচে ৪ ফুট দৈর্ঘ্য ৫ ফুট প্রস্থ নিয়ে একটি জায়গা পাকাকরণসহ মালপত্র লাগিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করবে ঠিকাদার। আর ওই সমস্ত কাজ বুঝে নেবেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কাজ বাস্তবায়ন হলে তাদের দেওয়া প্রত্যয়নে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ আছে, নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পাম্প স্থাপন হলেও অধিকাংশ পানির ট্যাংক, পাকাকরণের কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে কাগজে-কলমে কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করেছে। কাজ না করেই পুরো বিল তারা উত্তোলন করে নিয়েছে।

Advertisement

উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে দেওয়ান সাইকুল ইয়ার একটি সাবমারসিবল পাম্প বরাদ্দ পান। নলকূপটি স্থাপন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারুল হক। কিন্তু ট্যাংক বসানো ও পাকাকরণসহ বাকি কাজ পড়ে আছে। কিন্তু সব ধরনের কাজ কাগজে-কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

সাইকুল ইয়ারে ভাই দেওয়ান মাশায়েক ইয়ার চৌধুরী বলেন, ‘দুবছর আগে আমার ভাইয়ের নামে পাম্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুধু পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পাকাকরণের কোনো কাজ করা হয়নি। এমনকি পানির ট্যাংক পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অফিসের লোকজনদের অনেক বার বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’

একই অবস্থা মাঘান ইউনিয়নের কাতলা গ্রামের উপকারভোগী আনোয়ার হোসেনের। তিনি বলেন, ‘সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের পর থেকে দুবছর ধরে অফিসে আসা-যাওয়া করছি। পাকাকরণ তো দূরের কথা পানির ট্যাংকটা পর্যন্ত দেয়নি। বাকি কাজ মনে হয় আর হবে না।’

শুধু আনোয়ার হোসেন ও দেওয়ান সাইকুল ইয়ার নয়, তাদের মতো আরও অর্ধশত সুবিধাভোগী পানির ট্যাংক ও মালপত্রের জন্য অফিসে মাসের পর মাস ঘুরছেন।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আনোয়ারুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরসহ অনেক কাজ এখনো বাকি আছে। অফিসের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’ তবে কাজ শেষ না করে বিল উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর মেলেনি।

মদন উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারীর প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি। আগের এবং চলমান প্রকল্পের মোট ৮৭টি নলকূপ পাকাকরণের কাজ এখনো বাকি আছে। যেগুলো কাজের বিল এখনো দেওয়া হয়নি। সেগুলো কাজ বাস্তবায়ন না করলে আমি বিল দেবো না।’

মেসার্স আনোয়ারুল হকের বিল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে যারা কর্মরত ছিলেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। তবুও আমি বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষতে জানাবো।’

এ বিষয়ে জানতে মদনের তৎকালীন জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনি রায়হানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাজ বাস্তবায়ন না করেই কীভাবে বিল দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নেবো। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এইচ এম কামাল/এসজে/জেআইএম