আন্তর্জাতিক

ইলন মাস্ককে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক কিনে নেওয়ার পরামর্শ

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রেজারের সিইও মিন-লিয়াং ট্যান টুইটার কর্তৃপক্ষকে অর্থাৎ, ইলন মাস্ককে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) কিনে নেওয়ার ও এটিকে একটি ডিজিটাল ব্যাংকে রূপ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মজার বিষয় হলো, টুইটার প্রধান ইলন মাস্ক মিন-লিয়াংয়ের ওই পরামর্শের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

Advertisement

এক টুইটে ইলন বলেন, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আমি প্রস্তুত। তবে তিনি যে আসলেই ব্যাংকটি কিনে নেবেন সেরকম ঘোষণা এখন পর্যন্ত কোথাও দেননি।  

 

I think Twitter should buy SVB and become a digital bank.

— Min-Liang Tan (@minliangtan) March 11, 2023

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। বুধবার (৮ মার্চ) ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিছু শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়। সে ঘোষণাই কাল হয়ে দাঁড়ায় ৪০ বছরে পুরোনো ব্যাংকটির জন্য।

Advertisement

আরও পড়ুন>> ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকহারে জামানত তুলে নেয়, কমে যায় শেয়ারের দরও। আর তাতেই মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‍পুরোপুরি দেউলিয়া হয়ে যায় এসভিবি। শুক্রবার (১০ মার্চ) ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকটি বন্ধ করে দিয়ে তাদের সব আমানতের দায় নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

রয়টার্সের খবর অনুসারে, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম ব্যাংকের পতন এটি। এর ফলে বিভিন্ন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের শত শত কোটি ডলার আটকে গেছে। গোটা বিশ্বের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> ঋণ পুনর্গঠনে চ্যালেঞ্জের মুখে আইএমএফ

Advertisement

এর আগে, ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংক’ বন্ধের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হতো।

কী হয়েছিল সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের?

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এসভিপি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। মূলত নতুন ব্যবসা বা স্টার্টআপদের ঋণ দিয়ে থাকে এই ব্যাংক।

ফরচুন ডটকমের তথ্যমতে, চার দশকের পুরোনো ব্যাংকটি যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশের বেশির স্টার্টআপকে তহবিল জুগিয়েছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংকটির আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পোর্টফোলিওর ৫৬ শতাংশই ভেঞ্চার বা প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ড।

এসভিবির আর্থিক প্রোফাইলের মূল চালিকাশক্তিই হলো গ্রাহক তহবিল। ২০২১ সালে ব্যাংকটিতে বিপুল হারে আমানত আসতে শুরু করে। ২০১৯ সালের তাদের ঘরে ৬১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমানত ছিল। ২০২১ সালে তা বেড়ে ১৮৯ দশমিক ২০ বিলিয়নে পৌঁছায়।

আরও পড়ুন>> ইউক্রেন যুদ্ধে বদলে গেছে বিশ্ব রাজনীতির হিসাব-নিকাশ

তবে আমানত বাড়লেই তো হবে না। ব্যাংকের মূল কাজ ঋণ দেওয়া। এত বেশি মূলধন নিয়েও সেভাবে দ্রুত হারে ঋণ দিতে পারেনি এসভিবি। তবে এমন পরিস্থিতিতে হাতে থাকা মূলধন নষ্ট করতে চায়নি ব্যাংকটি।

হোল্ড-টু-ম্যাচিউরিটি (এইচটিএম) পোর্টফোলিওর জন্য এই আমানতের টাকা দিয়ে মর্টগেজ-ব্যাকড সিকিউরিটিজ (এমবিএস) কিনতে শুরু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ৮০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সিকিউরিটিজ কিনে ফেলে তারা। এই এমবিএসের প্রায় ৯৭ শতাংশের মেয়াদ ছিল ১০ বছরের বেশি, গড় রিটার্ন ছিল ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় কিছুদিন পরেই। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের রিটার্ন কমতে থাক। কারণ বিনিয়োগকারীরা তখন ফেডারেল ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী ‘ঝুঁকিহীন’ বন্ড কেনাতেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেখানে প্রায় নিশ্চিত ২ দশমিক ৫ গুণ রিটার্ন পাবেন তারা। ফেডের ক্রমবর্ধমান সুদের হারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বন্ডের দামও কমতে থাকে।

শেয়ারের দামে প্রভাব

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পোর্টফোলিওতে ক্রমেই বাড়তে থাকে লোকসান। এমন সময়ে টাকা জোগাড় করতে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কিন্তু এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ায় এসভিবির শেয়ার রেকর্ড দরপতনের সম্মুখীন হয়। তাদের শেয়ারের দর প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যায়। আবার, তহবিল সংগ্রহের জন্য সিকিউরিটিজ বিক্রি করতে গিয়েও তারা প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার লোকসান করে।

আরও পড়ুন>> আমেরিকায় এক মাসে তিন লাখ নতুন চাকরি

এ অবস্থায় কোম্পানিগুলো সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক থেকে নিজেদের অর্থ তুলে নিতে শুরু করে। গুরুতর আর্থিক ঘাটতিতে ভুগছে এসভিবি এমন গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিগুলো অর্থ ফেরত নিতে শুরু করে। গ্রাহকরাও নিজেদের জমা রাখা অর্থ তুলে নেন। এতে কার্যত খালি হয়ে যায় ব্যাংকের ভল্ট।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, কেবল গুজবের কারণে যে কোনো ব্যাংক ধসে পড়তে পারে, তার বড় উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক।

সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স, সিএনবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস

এসএএইচ/কেএএ