‘২০ মিটারগেজ লোকোমোটিভ ও ১৫০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় রেলের ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইঞ্জিন এবং ১৫০টি মিটারগেজ কোচ সংগ্রহ করতে গিয়ে ২ দশমিক ২ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। প্রতি ডলার ১০৪ টাকা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২২৮ কোটি টাকা। দক্ষিণ কোরিয়ার দেওয়া এই ঋণের সাশ্রয় হওয়া অর্থে আরও ৩০ থেকে ৩৫টি কোচ কিনতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আর আগের দামে কোচ মিলবে না। প্রতিটি কোচের জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দাম পরিশোধ করতে হতে পারে। ফলে দক্ষিণ কোরিয়ান ঋণের সাশ্রয় হওয়া ২২৮ কোটি টাকা খরচ হবে উচ্চ মূল্যের রেল কোচের দাম পরিশোধে।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২২ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। টাকা ফেরত না দিয়ে আমি কোচ কেনার পক্ষে। এই অর্থে ৩০ থেকে ৩৫টি কোচ কেনা যাবে। তবে আগের থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তি দামে কোচ সংগ্রহ করতে হবে। এখন সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। আগের দামে কোচ মিলবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থ ৩৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি ১ হাজার ৪১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ। মূল প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় তিন বছর বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন: বগি বাড়ছে ট্রেনে
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় ২০টি লোকোমোটিভ কেনা হয়েছে। সেখানে সাশ্রয় হয়েছে ৯ মিলিয়ন ডলার। তবে লোকোমোটিভ কেনায় সাশ্রয় হওয়া অর্থ উন্নয়ন সহযোগীদের ফেরত দিতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজের মধ্যে ৪০টি দেশে এসেছে। আরও ১৮টি ক্যারেজ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শিগগির শিপমেন্ট হবে। সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে। বাকিগুলো আসবে পর্যায়ক্রমে। প্রকল্পের আওতায় আসা ২০টি লোকোমোটিভ বর্তমানে রেলওয়ে ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) অনুষ্ঠিত প্রকল্প পর্যালোচনা সভায় অব্যবহৃত ওই ২২ মিলিয়ন ডলার কী করা হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। ইআরডি’র পরামর্শের আলোকে ক্যারেজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এম/এস এসএসআরএসটি’র কাছে অতিরিক্ত ক্যারেজ সংগ্রহের বিষয়ে নতুন দর চাওয়া হয়। সরবরাহকারী বর্তমান চুক্তিমূল্যের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি চায়।
Advertisement
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে আরও জানায়, উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করতে দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন অর্থায়ন কর্মসূচি হলো ইডিসিএফ। সেক্ষেত্রে সরবরাহকারীর সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে দাম কমানো সম্ভব হতে পারে। ইডিসিএফ সফট ঋণ। বিধায় এটি ফেরৎ না দিয়ে ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা যৌক্তিক হবে।
আরও পড়ুন: ভুল জায়গায় রেলের ওয়াশিং প্ল্যান্ট, বেড়েছে বিড়ম্বনা
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস. এম. সলিমুল্লাহ বাহার জাগো নিউজকে বলেন, রেলের ইঞ্জিন কেনায় ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হয়েছে, এটি ফেরত দেওয়া হবে। আমরা পৃথক দুটি ঋণের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করছি। তবে রেল কোচ কেনায় ২২ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে আরও কোচ কিনবো।
বাড়তি দামে কোচ কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আগের দামে কোচ পাবো, এটা চিন্তা করাও ভুল হবে। বর্তমানে বৈশ্বিকভাবেই সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী।
এ নিয়ে ইআরডি জানায়, বাড়তি মূল্যে পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) অনুযায়ী কাজ করার বিষয়ে সিপিটিইউ (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) থেকে মতামত নেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে ইডিসিএফ গাইডলাইন পরীক্ষা করে সে আলোকে নেওয়া যেতে পারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ। অতি পুরাতন মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ প্রতিস্থাপন এবং মিটারগেজ সেকশনে এমজি ডিই লোকোমোটিভ ও যাত্রীবাহী ক্যারেজের স্বল্পতা দূর করা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান যাত্রী ও মালামাল পরিববহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিষেবা বৃদ্ধি করাও প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
এমওএস/এমএইচআর/এসএইচএস/এমএস