ধর্ম

জুমার আগে সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

আজ শুক্রবার। জুমার দিন। ১০ মার্চ ২০২৩ ইংরেজি, ২৫ ফাল্গুন ১৪২৯ বাংলা, ১৭ শাবান ১৪৪৪ হিজরি। শাবান মাসের তৃতীয় জুমা আজ। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- জুমার আগে সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত।

Advertisement

সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা আছে, জুমার জন্য যেন আগে আগে যাওয়া হয়, মসজিদে পৌঁছে যদি দেখা যায়, ইমাম খুৎবার জন্য আসেননি তাহলে নামাজ পড়বে, ইমাম এসে গেলে  চুপচাপ বসে খুৎবা শুনবে।

জুমার নামাজের আগে সুন্নত পড়া নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি করা হয়। অথচ হাদিসের বর্ণনায় জুমার খুতবা ও নামাজ শুরু হওয়ার আগে সুন্নত পড়ার ব্যাপারে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যতটুকু তাওফিক হয় যেন নামাজ পড়ে। পাশাপাশি জুমার দিনের করণীয় এ সুন্নত ও জুমার নামাজের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত। তাহলো-

১. হজরত আতা খোরাসানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নুবাইশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস বর্ণনা করতেন যে,

Advertisement

أن المسلم إذا اغتسل يوم الجمعة، ثم أَقْبَلَ إلى المسجد لا يُؤْذِيْ أحدا، فإن لم يجد الإمام خَرَج صلى ما بدا له، وإن وجد الإمامَ قد خرج، جلس، فاستمع وأنصت حتى يقضي الإمام جمعته وكلامه، إن لم يُغْفَر له في جمعته تلك ذنوبُه كلُّها، أن تكون كفارة للجمعة التي تليها.

মুসলিম যখন জুমার দিন গোসল করে মসজিদের দিকে রওনা হয়, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকে, ইমাম (খুৎবার জন্য) বের হয়নি দেখলে যে পরিমাণ ইচ্ছা নামাজ পড়ে, ইমাম বের হয়ে থাকলে বসে যায় ও চুপচাপ শুনতে থাকে, একপর্যায়ে ইমামের নামাজ ও কালাম সমাপ্ত হয়, তাহলে এ ব্যক্তির এ সপ্তাহের সকল গুনাহ যদি মাফ না-ও হয় এ তো অবশ্যই হবে যে, পরবর্তী জুমার জন্য তা কাফফারা হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ খন্ড ৫, পৃ. ৭৫, ২০৭২১)

২. হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لا يغتسل رجل يوم الجمعة ويتطَهَّر ما استطاع من طُهر ويَدَّهن من دُهنِه أو يمس من طيب بيته، ثم يخرج فلا يُفَرِّق بين اثنين، ثم يُصَلِّي ما كُتِب له، ثم يُنْصِت إذا تكلَّم الإمام، إلا غُفِر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى.

Advertisement

‘কোনো পুরুষ যখন জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে বা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে, এরপর (জুমার জন্য) বের হয় এবং (বসার জন্য) দুই জনকে আলাদা করে না, এরপর তাওফিক মতো নামাজ পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলে তখন চুপ থাকে, তাহলে অন্য জুমা পর্যন্ত তার (গুনাহ) মাফ করা হয়।’ (বুখারি ৮৮৩; মুসনাদে আহমদ ৮/৪৩, ২৩৭১০; ইবনে হিববান ২৭৭৬)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

من اغتسل ثم أتى الجمعة فَصَلَّى ما قُدِّر له ثم أنصت حتى يفرغ من خطبته، ثم يصلي معه، غفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى وفضل ثلاثة أيام.

যে গোসল করে, এরপর জুমায় আসে, এরপর তাওফিক মতো নামাজ পড়ে, এরপর চুপ থাকে (ইমাম) তার খুতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত, এরপর তার সঙ্গে নামাজ পড়ে, তার অন্য জুমা পর্যন্ত ও আরও তিন দিনের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম ৮৫৭)

৪. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

من اغتسل يوم الجمعة واستاك، ومسَّ من طيب إن كان عنده، ولبِس من أحسن ثيابه، ثم خرج حتى يأتي المسجد، فلم يتَخَطَّ رِقاب الناس حتى ركع ما شاء أن يركع، ثم أنصت إذا خرج الإمام فلم يتكلم حتى يفرغ من صلاته، كانت كفارة لما بينها وبين الجمعة التي قبلها قال (الراوي) : وكان أبو هريرة يقول : وثلاثة أيام زيادة، إن الله جعل الحسنة الحسنة بعشر أمثالها.

‘যে জুমার দিন গোসল করে ও মিসওয়াক করে, তারপর সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, নিজের একটি উত্তম পোশাক পরিধান করে, এরপর বের হয় ও মসজিদে আসে এবং মানুষের কাঁধ ডিঙ্গানো থেকে বিরত থাকে, এরপর যে পরিমাণ ইচ্ছা রুকু (নামাজ আদায়) করে, এরপর ইমাম যখন বের হয় তখন থেকে তার নামাজ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকে, তাহলে এ জুমা থেকে আগের জুমা পর্যন্ত যা (গুনাহ) হয়েছে তার কাফফারা হয়ে যায়। (বর্ণনাকারী) বলেন, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, এর সাথে আরও তিন দিনের (গুনাহ মাফ হয়)। আল্লাহ তাআলা নেক আমলকে দশগুণ বানিয়ে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৩/৮১, ১১৭৬৭; আবু দাউদ, ৩৪৩)

৫. হজরত আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

من اغتسل يوم الجمعة، ثم لبس ثيابه، ومَسَّ طيبا إن كان عنده، ثم مَشَى إلى الجمعة وعليه السكينة، ولم يَتَخَطَّ أحدا ولم يؤذه، رَكَعَ ما قُضِي له، ثم انتَظَر حتى ينصرف الإمام، غُفِر له ما بين الجمعتين.

‘যে জুমার দিন গোসল করে, এরপর তার পোশাক পরিধান করে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, এরপর ধীরস্থিরভাবে জুমার দিকে যায়, কাউকে ডিঙ্গিয়ে (সামনে) যাওয়া থেকে বিরত থাকে, কাউকে কষ্ট দেয় না, তাওফিক মতো রুকু (নামাজ আদায়) করে, এরপর ইমাম নামাজ সমাপ্ত করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার দুই জুমার মাঝে যা (গুনাহ) হয়েছে  তা মাফ করে দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমদ ৫/১৯৮, ২১৭২৯)

এই হাদিসগুলোতে ইমাম খুৎবার জন্য উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত যে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে তা তো কাবলাল জুমা বা জুমার আগের নামাজই। গোসল করে জুমার জন্য ঘর থেকে বের হল এবং ইমামের অপেক্ষায় রইল, ইত্যবসরে যে নামাজ পড়া হবে তা যে ‘কাবলাল জুমা’ নামাজ। যারা বলেন, জুমার আগে কোনো নামাজ নেই, তাদের জন্য উপরোক্ত হাদিসগুলো মনে রাখা প্রয়োজন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার খুতবার আগে ইখলাসের সঙ্গে সঠিক পন্থায় সুন্নত নামা আদায় করার তাওফিক দিন এবং জুমার নামাজের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস