দেশজুড়ে

‘নারী’ বলে ৪০ বছরেও চার বোনের জোটেনি জেলে কার্ড

বরগুনার তালতলী উপজেলার নিওপাড়া এলাকায় মাছ শিকার করে সংসার চলে চার বোনের। এ পেশায় তাদের কেটে গেছে প্রায় চার দশক। তবে আজও জোটেনি জেলে কার্ড। এ চার বোনের অভিযোগ, নারী হওয়ায় তাদের জেলে কার্ড দেওয়া হয় না।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালতলী উপজেলার নিওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাচেন মোল্লা। তার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং শারীরিক অসুস্থ থাকার কারণে অল্প বয়সে চার মেয়েকে বিয়ে দেন। বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় মেয়েদেরও বিয়ে হয় দরিদ্র পরিবারে।

বিয়ের পর থেকেই ওই চার বোন রাহিমা বেগম (৬৫), হালিমা বেগম (৬০), ফাতেমা বেগম (৫৫) ও জরিনা খাতুন (৫০) পেটের দায়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বসবাস করেন নিওপাড়া এলাকার একটি জরাজীর্ণ সরকারি আবাসনে। দীর্ঘ বছর এ পেশার সঙ্গে থাকলেও তাদের জীবনমানের পরিবর্তন হয়নি। কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে জীবন চলছে তাদের। তাদের ছেলেমেয়েরাও বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। তাই বাধ্য হয়ে এ বয়সেও মাছ শিকার করে পেটের খোরাক জোগাড় করতে হয় তাদের।

কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মাছ শিকারের পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও নারী হওয়ায় জেলে তালিকায় তাদের নাম ওঠেনি। তাই বঞ্চিত হচ্ছেন জেলেদের স্বাবলম্বী করার জন্য সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সহযোগিতা থেকে।

Advertisement

জরিনা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাবার শারীরিক সমস্যার কারণে তেমন আয়-রোজগার করতে পারতো না। ঘরে খাবার থাকতো না। তাই ছোটবেলা থেকেই পেটের দায়ে চার বোন মাছ ধরে জীবন চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। কখনো হাত দিয়ে মাছ ধরি, আবার কখনো বড়শি বা জাল দিয়ে। অনেক কষ্টে জীবন কাটছে আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘আমার এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে বউ নিয়ে আলাদা সংসারে থাকে। আমার স্বামী ঘরে অসুস্থ। আমি মাছ ধরে যা আয় করি তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছি।’

আরেক বোন হালিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাছ পাওয়ার আশায় প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে নদীতে নৌকায় বসে বড়শি ফেলি। কখনো বড়শিতে চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা আবার কখনো ধরা পড়ে রুই, পাঙাশসহ নানা প্রজাতির মাছ। এসব মাছ বাজারে নিলে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে কখনো কখনো খালি হাতেও ফিরতে হয়।’

রাহিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের চার বোনের সংসার মাছ ধরেই চলে। বাবার তেমন ভিটেমাটি, টাকা-পয়সা ছিল না। তাই বিয়ে দিয়েছে গরিব ঘরে। স্বামীর বয়স হয়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে পড়ে আছে। সে কোনো কাজ করতে পারে না। বড়শি দিয়ে আমি মাছ ধরে যা আয় রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়।’

Advertisement

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরি। কিন্তু যারা কোনোদিনও মাছ ধরে নাই তারাও জেলে কার্ডের চাল পায়। কিন্তু আমরা ‘নারী’ বলে আমাদের নাম জেলে তালিকায় ওঠে নাই। তাই কোনো সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছি না।”

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার টুম্পা বলেন, ঘটনাটি শুনে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই চার বোনকে নিয়ম অনুযায়ী জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ছাগল ও অন্যান্য প্রণোদনার মাধ্যমে যেন তারা জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন সেজন্য খুব শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জাগো নিউজকে বলেন, যারা মাছ শিকারে জড়িত তারা সবাই জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। নারী বা পুরুষ মূল বিষয় নয়, জেলে হলেই তিনি তালিকাভুক্ত হবেন। ওই চার বোন আবেদন করলে তাদের জেলে কার্ড দেওয়া হবে। জেলেদের স্বাবলম্বী করার জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তাদের সহায়তা করা হবে।

এসআর/জেআইএম