আন্তর্জাতিক

গেদে-দর্শনা স্থলবন্দর চালু, সুদিনের আশায় ব্যবসায়ীরা

ধৃমল দত্ত, কলকাতা: 

Advertisement

প্রায় তিন বছর পর ফের খুলে দেওয়া হয়েছে গেদে-দর্শনা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। এর ফলে এই আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরা ফের ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে উচ্ছ্বাসিত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে গেদে-দর্শনা স্থলবন্দরে সবধরনের ভিসাপ্রদান বন্ধ রাখা হয়। পরে বয়স্ক রোগী ও বিজনেস ভিসা চালু করা হলেও ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে তা ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রায় তিন বছর ভারতীয়রা যাতায়াত করতে পারলেও এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিরা ভারতে প্রবেশ করতে পারেননি। এর কারণে দুই দেশের নাগরিকদের পারাপারের জন্য চাপ পড়তো ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরে।

আরও পড়ুন>> মুরগির দাম বাড়লো কলকাতায়ও

Advertisement

অবশেষে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়, সেখানে গেদে-দর্শনা সীমান্তটি ফের চালু করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরেই গত বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট।

গেদে স্থলবন্দর কর্মকর্তা অজয় নারায়ণ রায় জানান, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে একটি নোটিশ এসেছে। এটি সরকারিভাবে পাইনি, কেবল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন>> মমতার পরিবারে অ্যাডিনোর হানা

তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৪ মার্চ এই সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেটি ফের খুলে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। আমরা সীমান্ত চালু করতে প্রস্তুত। আমাদের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এদিকে, গেদে-দর্শনা স্থলবন্দরে বিগত তিন বছর ধরে ভিসার অনুমতি বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হন সীমান্তবর্তী এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষেরা। এসব এলাকায় বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় অফিস রয়েছে। রয়েছেন রেলের অধীনস্থ কুলি, হকার, খাবারের হোটেল। ভ্যান-রিক্সাচালকেরা তো রয়েছেনই।

অবশেষে সীমান্তের বাধা দূর হওয়ায় একদিকে যেমন খুশি পর্যটকরা। তেমনি উচ্ছ্বাসিত মানি এক্সচেঞ্জ ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরাও।

রেলের লাইসেন্সধারী কুলি সনজিৎ রায় বলেন, আমাদের কাজ রেলের যাত্রীদের মালামাল বহন করা। সেটি তিন বছর বন্ধ থাকার কারণে তেমন রোজগার নেই। এখন এই রুট চালু হওয়ায় আশা করছি ফের রোজগার হবে।

আরও পড়ুন>> নতুন দুটি খাল খনন করবে রাজ্য সরকার, বাংলাদেশের ক্ষতির আশঙ্কা

গেদে-দর্শনা দিয়ে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গাবাসীদের ভারতে, বিশেষ করে কলকাতা ভ্রমণ অত্যন্ত সহজ এবং খরচও কম।

মহিন আব্রাহাম নামে এক বাংলাদেশি যাত্রী জানান, এখানে ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকায় আমাদের প্লেনে বা অন্য সীমান্ত দিয়ে যেতে হতো। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি হতো। কিন্তু এই সীমান্ত চালু হওয়ায় অনেক কম খরচে যেতে পারছি। তাছাড়া যাত্রাপথে কোনো বিরতিও নেই।

তাপস তরফদার নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকায় আমরা পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছি। কারণ, এখানে আমাদের একমাত্র রুটি-রুজির মাধ্যম বাংলাদেশি যাত্রীরা। তাদের যাতায়াতের ওপরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরা কয়েকশ’ পরিবার নির্ভরশীল। ফলে বাংলাদেশিদের যাতায়াত ফের শুরু হলে আমাদের সুদিন ফিরে আসবে।

মানি এক্সচেঞ্জে কর্মরত দীনবন্ধু মহলদার জানান, বাংলাদেশি যাত্রীদের এই স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকায় প্রায় ৩৫ মাস আমি এবং আমার সহকর্মীরা বেকার ছিলাম। সীমান্তটি ফের চালু হওয়া সত্যিই খুশির খবর। আমরা হয়তো আবার আমাদের সুদিন ফিরে পাবো।

কেএএ/