তুরস্ক-সিরিয়ায় শতাব্দীর ভয়াবহতম ভূমিকম্প আঘাত হানার এক মাস পূরণ হলো আজ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তীব্র ভূকম্পনে দুলে ওঠে তুরস্কের দক্ষিণ এবং সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। রিখটার স্কেলে সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর কয়েক ঘণ্টা পরে ওই এলাকায় আবারও আঘাত হানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প।
Advertisement
প্রলয়ংকরী সেই দুই ভূমিকম্পে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দেশ দুটির বিশাল এলাকা। এতে প্রাণ হারান ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ। আহত হয়েছেন কয়েক লাখ। এছাড়া ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁবুকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন অথবা অন্য শহরে চলে গেছেন আরও লাখ লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন>> ‘ভূমিকম্প, ভূমিকম্প’ খেলে ভয় কাটাচ্ছে শিশুরা
কেবল তুরস্কের দুর্গত এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের আঘাতে দেশটিতে অন্তত ১ লাখ ৭৩ হাজার ভবন ধসে পড়েছে অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তাঁবু, হোটেল অথবা অন্যান্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষকে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় ফিরলো ১৫০০ মরদেহ
৬ ফেব্রুয়ারির সেই ভূমিকম্পে তুরস্কে ১১টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর এক মাস পেরিয়ে গেলেও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, আজও অনেক ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা যায়নি। নিহত হিসেবে সরকারি খাতায় নাম ওঠেনি অনেকের। স্বজনেরা আজও তাদের হারানো প্রিয়জনদের খুঁজে ফিরছেন।
ভূমিকম্পের পর থেকে এখনো কতজন নিখোঁজ রয়েছেন সে বিষয়ে তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
আরও পড়ুন>> তুরস্কে ফের ভূমিকম্পে ভবনধস, হতাহত অর্ধশতাধিক
Advertisement
ভূমিকম্প আঘাত হানার পর বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগীদের শোক ক্রমেই রূপান্তরিত হয় ক্ষোভে। মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করে, কেন এত ভবন ধসে পড়লো। সেগুলো তো ভূমিকম্পপ্রতিরোধী হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য সরকারের দুর্নীতি ও কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভোগীরা।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নির্মাণ সংস্থাগুলো যথাযথ বিল্ডিং কোড মানেনি। আর তা জেনেশুনেই ছাড় দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে তীব্র বিতর্কের মুখে শেষপর্যন্ত নড়েচড়ে বসে তুর্কি প্রশাসন। তুরস্কে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে এ পর্যন্ত অন্তত ২৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ৩৩০ জন বিচার বিভাগীয় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এবং হেফাজতে রয়েছেন চারজন।
আরও পড়ুন>> তুরস্কে ত্রাণ পাঠালো রোহিঙ্গারা
এছাড়া ২৭০ জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশে রয়েছেন, এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন ৮২ জন এবং মারা গেছেন ৩২ জন।
সূত্র: আল-জাজিরা, ডয়েচে ভেলেকেএএ/