গত সপ্তাহেই নিউক্যাসলকে হারিয়ে কারাবাও কাপ জিতে নিয়েছিলো ম্যানইউ। লিগেও খুব বেশি খারাপ অবস্থায় নেই। এরিক টেন হাগের অধীনে কী তাহলে সুদিন ফিরছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে? এমনই যখন জ্বল্পনা-কল্পনা চলছিলো, তখন চির প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের মাঠে খেলতে গেলো ম্যানইউ।
Advertisement
সবাই ধরে নিয়েছিলো এই ম্যাচে ম্যানইউই ফেবারিট। এই মৌসুমে লিভারপুলের যে বাজে অবস্থা বিরাজমান, তাতে তারা উড়ে যেতে পারে ম্যানইউর সামনে; কিন্তু পুরো ম্যাচে যা ঘটলো, তা কী দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পেরেছিলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড?
১৯৩১ সালের পর, গত ৯২টি বছরে এমন লজ্জার মুখোমুখি আর কখনো হয়নি অল রেডরা। রোববার রাতে যে লজ্জা লিভারপুল দিয়েছে তাদেরকে। রীতিমত গোল উসবে মেতে উঠেছিলো রেড ডেভিলরা। গুনে গুনে মোট ৭ বার ম্যানইউর জালে বল জড়িয়েছে লিভারপুল। ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাসই গড়ে নিলো ইয়ুর্গেন ক্লুপের দল।
খেলার সাঠে ম্যানইউ-লিভারপুল দ্বন্দ্ব ঐতিহাসিক। শিরোপা জিততে পারুক আর না পারুক, দুই দলের মুখোমুখি হওয়া মানেই সেখানে মর্যাদার লড়াই তৈরি হওয়া। সেই লড়াইয়ের শতবর্ষের ইতিহাসেও ম্যানইউকে এত বড় ব্যবধানে কখনো হারাতে পারেনি লিভারপুল।
Advertisement
১৯৩১ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ উলভারহ্যাম্পন ওয়ান্ডারার্সের কাছে ৭-০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলো ম্যানইউ। তারও এক বছর আগে, ১৯৩০ সালের ডিসেম্বরে অ্যাস্টন ভিলার কাছে ৭-০, ১৯২৬ সালে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের কাছে ৭-০ গোলে পরাজয় বরণ করেছিলো ম্যানইউ। তাদের ইতিহাসে বড় পরাজয় বলতে ছিল এই তিনটিই। আধুনিক ক্লাব ফুটবলে প্রায় সমমানের একটি দল আরেকটি দলকে ৭-০ গোলে হারাবে, এটা নিচক অলিক কল্পনার বিষয়। অথচ, অ্যানফিল্ডে রোববার রাতে সে ঘটনাই ঘটালো লিভারপুল।
ডাচ তারকা কোডি গাকপো, উরুগুয়ের তারকা ডারউইন নুনেজ এবং মিশরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ- লিভাপুলের এই তিন তারকার প্রতিজনই করেছেন জোড়া গোল। এই ত্রয়ীর দাপটেই শেষ হয়ে যায় এরিক টেন হাগের দলের সব স্বপ্ন।
কাতার বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই নজর কেড়েছিলেন ফুটবলবিশ্বের। নেদারল্যান্ডসের নতুন তারকা কোডি গাকপোর হাত ধরে ৪৩ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় লিভারপুলের। এরপরই ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়া লিভারপুল ফুটবলারদের আক্রমণের মুখে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ম্যানইউ রক্ষণ।
যে ফুটবল দেখে সাবেক ম্যানইউ তারকা গ্যারি নেভিলের প্রতিক্রিয়া, ‘ম্যানইউ ফুটবলাররা প্রমাণ করে দিল, এখনও ওদের খেলায় কতটা উন্নতির প্রয়োজন। না হলে লিভারপুলের মতো দলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যে কত কঠিন, এটা সম্ভবত এরিক টেন হাগের চেয়ে ভাল কেউ বুঝবে না। এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সত্যিই খুব কঠিন।’
Advertisement
শিরোপার দৌড় থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়া লিভারপুলের কাছে এই ম্যাচ ছিল নিজেদের পায়ের নীচে মাটি ফিরে পাওয়ার। সে লক্ষ্যে ম্যাচের শুরু থেকে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলেই ম্যানইউ রক্ষণকে প্রবল চাপে ফেলে দিলেন সালাহরা।
ডাচ তারকা গাকপো নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ৫০ মিনিটে। তার আগেই অবশ্য চোট সারিয়ে ফেরা উরুগুয়ের নতুন আবিষ্কার নুনেজ গোল করে যান। ৩ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেই ম্যানইউয়ের ফুটবল ছ্ন্নছাড়া হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সালাহ জোড়া গোল করে ম্যানইউকে শেষ করে দেয়। গাকপোর পরিবর্ত হিসেবে খেলতে নামা ব্রাজিল তারকা রবের্তো ফিরমিনো দলের সপ্তম গোল করেন ৮৮ মিনিটে।
কেউ কেউ রোববার লিভারপুলের গোল-তাণ্ডবের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলেন ২০১১ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানইউ’র কাছে আর্সেনালের ৮-২ গোলে হারের সাদৃশ্যকে। সে সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পুরো ম্যাচে ম্যান ইউয়ের গোল লক্ষ্য করে আটটি শট নিয়েছিল লিভারপুল। তার মধ্যে গোল সাতটি!
২৫ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরেই থাকল ম্যান ইউ। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে উঠে এল লিভারপুল। দলের অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে লিভারপুল ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপের মন্তব্য, ‘কোনো ভাষা নেই। অসাধারণ একটি ম্যাচ। ফুটবলারদের বলেছিলাম এই ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিতে। এটা শুধুই একটা ম্যাচ নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুই ক্লাবের সম্মান এবং ঐতিহ্যের প্রশ্নও। আমার বক্তব্যের মর্মার্থটা ফুটবলাররা বুঝতে পেরেছে। তার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না।’
ম্যাচের পরে উল্লসিত লিভারপুল তারকা সালাহ বলেন, ‘এমন একটা জয়ের পরে কোনও প্রতিক্রিয়াই পর্যাপ্ত নয়। সতীর্থদের কাছে আমার বার্তা থাকবে, মাথা ঠান্ডা রেখে বাকি ম্যাচগুলো খেলতে হবে। আশা করছি, এমন একটা জয়ের পরে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’ আর এক তারকা জর্ডান হেন্ডারসনের মন্তব্য, ‘নিঃসন্দেহে এমন একটা জয়ের উচ্ছ্বাস অন্য ধরনের হয়ে থাকে। তবে আমাদের পরের ম্যাচ নিয়ে এখন থেকেই মনঃসংযোগ করতে হবে।’
আইএইচএস/