দেশজুড়ে

রোজার আগে বাড়ি আসার কথা ছিল নিহত সালাউদ্দিনের

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণের ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের মো. সালাউদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার পাঠানো টাকায়ই চলতো দরিদ্র বাবার সংসার। ঘরে তার বাবাসহ সৎমা, দুই ভাই ও তিন বোন আছেন।

Advertisement

আসন্ন রমজান মাসের আগেই বাড়িতে আসার কথা ছিল সালাউদ্দিনের। এর আগেই দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মরদেহ শেষবার দেখার জন্য বাড়িতে আত্মীয়স্বজনরা অপেক্ষা করছেন। দ্রুত সালাউদ্দিনের মরদেহ পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন স্বজনরা।

রোববার (৫ মার্চ) সকালে কমলনগর উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লরেন্স গ্রামের বাড়িতে গেলে সালাউদ্দিনের স্বজনরা এ তথ্য জানান। তিনি ওই এলাকার মহিজল হকের বড় ছেলে। তিনি সীতাকুণ্ডের ওই অক্সিজেন প্ল্যান্টের গাড়িচালক ছিলেন।

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে নিহত ৬

Advertisement

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, মহিজল হক লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করেন। সালাউদ্দিনের পাঠানো টাকা ও মানুষের কাছে হাত পেতে দুঃখ-দুর্দশায় সংসার চলতো তার। অভাব-অনটনের সংসারে বড় ছেলেই ছিল অন্যতম ভরসা। শনিবার রাতে চট্টগ্রাম হাসপাতাল একজন চিকিৎসক বাড়িতে ফোন দিয়ে সালাউদ্দিনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। সালাউদ্দিনের মৃত্যুতে তার দাদি হাজেরা খাতুনসহ স্বজনরা ভেঙে পড়েছেন।

এদিকে, খবর পেয়ে ভোরে মহিজল তার অন্য দুই ছেলে সবুজ হোসেন ও রাকিব হোসেনকে নিয়ে সীতাকুণ্ডে ছুটে গেছেন। সেখানে ছেলের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।

নিহত সালাউদ্দিনের দাদি হাজেরা খাতুন জানান, সালাউদ্দিনসহ তিন সন্তান রেখে ১০-১২ বছর বয়সে তাদের মা জোসনা বেগম মারা যায়। এরপর তার বাবা রাহিমা বেগমকে বিয়ে করেন। বাড়িতে সবাই মিলেমিশেই ছিলেন। তারা উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের সাহেবেরহাট গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১০ বছর আগে নদীভাঙনে ভিটেমাটি সব বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে পাশের চরলরেন্স ইউনিয়নের চরলরেন্স গ্রামে এসে বাড়ি নির্মাণ করেন।

ছয়-সাত বছর আগে কাজের সন্ধানে সালাউদ্দিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড যান। প্রথম অবস্থায় কনস্ট্রাকশন কাজে পাথর ভাঙার দায়িত্বে ছিলেন। প্রায় সাত মাস আগে অক্সিজেন প্ল্যান্টে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন বলে শুনেছেন তারা। প্রায় তিন মাস আগে তিনি বাড়ি আসেন। তখন বলেছিলেন, রমজানের আগেই বাড়িতে আসবেন। কিন্তু তার আর জীবিত আসা হলো না। গত রাতে চট্টগ্রামের এক ডাক্তার ফোন করে প্রথমে বলেন সালাউদ্দিন আহত হয়েছেন। পরে ইমোতে ছবি পাঠালে তাকে শনাক্ত করা হয়। এরপর সালাউদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইলফোনে কল করলে স্থানীয় এক পান দোকানি তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

Advertisement

বৃদ্ধা হাজেরা খাতুন বলেন, কোলে-পিঠে করে তাকে মানুষ করেছিলাম। আমার সালাউদ্দিন আর নেই। আর দাদি বলে ডাকবে না। কখনো তার পথ চেয়ে থাকতে হবে না। আমার ছেলে গেছে তার লাশ নিয়ে আসার জন্য। কখন আনবে, কখন দেখবো শেষবারের মতো সালাউদ্দিনকে।

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল আমিন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। পরিবারটি খুব দরিদ্র। শুনেছি সালাউদ্দিনই একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। সংশ্লিষ্টদের তার পরিবারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, খবর পেয়ে সালাউদ্দিনের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ আনতে তার বাবা ও দুই ভাই সীতাকুণ্ড গেছেন। ঘটনাটি দুঃখজনক।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুলপুর এলাকায় ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে বিস্ফোরণের ঘটনায় সালাউদ্দিন নিহত হন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

কাজল কায়েস/এমআরআর/জিকেএস