বিতর্ক যেন দেশের ক্রিকেট, ক্রিকেটার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পিছু ছাড়ছে না। এতো বিতর্ক আর সমালোচনা থাকার পরও মানুষের মনের গহীনে ক্রিকেট আছে, থাকবে।
Advertisement
সমালোচনা ও বিতর্ক উপেক্ষা করে বাংলাদেশের খেলা হলেই দর্শকরা ছুটে যান গ্যালারিতে। উপভোগ করেন তামিম-সাকিবদের খেলা। সেই খেলা দেখতে গিয়ে দর্শকরা আসলে কতটা তৃপ্ত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি দর্শকমুখর গ্যালারিতেই।
চলছে ইংল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ। এরইমধ্যে সিরিজটি নিশ্চিত করে নিয়েছে ইংলিশরা। ২য় ম্যাচ দেখতে ছুটির দিন শুক্রবার মিরপুরে দর্শকদের কমতি ছিল না। কানায় কানায় ভরা গ্যালারি। উৎসবমুখর ছিল চারপাশ; কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে দেখা যায় কিছু মানুষের মাঝে উৎসব নেই। সাকিব-তামিমদের চার ছয়েও উদযাপন করতে গিয়ে থেমে যাচ্ছেন তারা।
কথা হয় মনে বিষাদ চেপে ধরা কয়েকজন দর্শকের সাথে। তারা জানান, ছুটির দিনে দুপুর ১২টায় এসেছেন খেলা দেখতে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে তারা খাবার খায়নি। গ্যালারিতে খাবারের দাম যা চাওয়া হয়েছে, তা আকাশছোঁয়া, যা কিনে খাওয়া তাদের কাছে অসাধ্য ব্যাপার।
Advertisement
তারা বলেন, পকেটে টাকা নেই বিষয়টি এমনও নয়। টাকা যা আছে তা দিয়ে বাইরে পেটপুরে খাওয়া যাবে। গ্যালারিতে খাবারের দাম দ্বিগুণ কিংবা তার চেয়েও বেশি। এমনটা হবে কেন? খাবার নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক হলেও খাবারের দাম দ্বিগুণ রাখাটি অযৌক্তিক, অন্যায় বলেও অভিযোগ দর্শকদের। শুধু কি ভারী খাবার? চা, কফি, আইসক্রিম, পানিসহ সবকিছুর দাম দ্বিগুণের চেয়েও বেশি লুফে নিচ্ছেন বিসিবি নির্ধারিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন থাকে বাড়তি নিরাপত্তা। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাও মোতায়েন থাকে স্টেডিয়াম ও আশপাশে এলাকায়। তবুও গ্যালারিতে দেদারছে চলছে এসব অনিয়ম। দেখেও যেন দেখার কেউ নেই। টিকিট কালোবাজারি কিংবা দ্বিগুণ দামে পণ্য বিক্রয় যেন কোনো অপরাধ নয় এখানে!
গ্যালারিতে পণ্যের অতিরিক্ত দামের অভিযোগটি ছোট্ট হলেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেক বড় অপরাধই বটে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ওষুধ বা সেবা; বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
বিসিবির অফিসিয়াল কার্ড গলায় ঝুলিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে গ্যালারিতে। নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত দামে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে দর্শকদের। সরেজমিনে দেখা মিলে, বিসিবির দেওয়া কার্ড ঝুলিয়ে কফি বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ টাকায়। স্টেডিয়ামের বাইরে যার মূল্য সর্বোচ্চ ১৫ টাকা।
Advertisement
দুই লিটার পানির বোতল বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকা, যার বাজারমূল্য ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আইসক্রিমের প্যাকেটে ২৫ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি করছে ৫০ টাকায়। এমনকি ওয়ান টাইম এক গ্লাস পানির মূল্য ১০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে দর্শকদের ক্ষোভ থাকার পাশাপাশি আছে অভিযোগও। ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, ক্লান্ত থাকা দর্শকদের নিরুপায় হয়ে এসব খাবার বেশি টাকা দিয়ে কিনে খেতে হচ্ছে। দ্বিগুণ দামে খাবার বিক্রির ব্যবসা না করে নির্ধারিত দামে বিক্রির অনুরোধ জানিয়েছেন দর্শকরা।
কথা হয় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সাথে। তিনি বলেন, ‘কোনো পণ্যের প্যাকেটে যদি মূল্য লেখা থাকে, সেই পণ্য যদি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয় তবে আইন অনুযায়ী এটি অপরাধ। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করতে পারবে না। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো ব্যক্তি অভিযোগ করলে, যতো বড় প্রতিষ্ঠানই হোক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
আইএইচএস/