ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
Advertisement
শনিবার (৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এ বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে ফুলপরী, থাকবেন বঙ্গমাতা হলে
Advertisement
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান।
এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ঘটনা তদন্তে নেমে ফুলপরী খাতুনের ওপর নির্যাতনের সত্যতা খুঁজে পায় তদন্ত কমিটি। ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে বেশকিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। আগামী ৮ মে‘র ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।
আরও পড়ুন: দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষকে প্রত্যাহার
Advertisement
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় হাইকোর্টের আদেশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এরই জেরে গত বুধবার দুপুরেই দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করা হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ সাত-আটজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেইসঙ্গে ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ।
এছাড়া ঘটনাটি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।
আরও পড়ুন: নেত্রী সানজিদাসহ অভিযুক্তদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই মাঝে গত ১৮, ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কমিটির ডাকে মোট তিনবার পৃথকভাবে ক্যাম্পাসে এসে সাক্ষাৎকার দেন ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। এরইমধ্যে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে ছাত্রলীগ গঠিত তদন্ত কমিটি। এর ভিত্তিতে গত ১ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে পাঁচ অভিযুক্ত নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।
রুমি নোমান/এমআরআর/এমএস