আন্তর্জাতিক

অস্ত্রের নেশায় দুর্ভিক্ষ ডাকছে উ. কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ায় তীব্র হচ্ছে খাদ্য সংকট। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে খুব শিগগির দেশটিতে অনাহারে মারা পড়বেন অসংখ্য মানুষ। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্য স্বৈরশাসক কিম জং উনের খামখেয়ালি শাসন এবং অস্ত্রপ্রীতিকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর সিএনএনের।

Advertisement

কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, গত তিন দশকের মধ্যে ভয়ংকরতম দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে চলেছে উত্তর কোরিয়া। এর আগে ১৯৯০ সালে দেশটিতে দুর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এবারও একই পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পিটারসন ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের গবেষণা বিশ্লেষক লুকাস রেঙ্গিফো-কেলারের মতে, বাণিজ্য তথ্য, স্যাটেলাইট চিত্র এবং জাতিসংঘ ও দক্ষিণ কোরীয় কর্তৃপক্ষের মূল্যায়নে স্পষ্ট যে, উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সরবরাহ ‘ন্যূনতম মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়েও নিচে নেমে গেছে’।

স্বৈরশাসিত দেশটিতে খাদ্য বিতরণে অভিজাত শ্রেণি এবং সামরিক বাহিনীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে, বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে যদি সব খাদ্য সমানভাবে বিতরণ করা হয়, তবুও দেশটিতে ‘ক্ষুধাজনিত মৃত্যু’ দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ রেঙ্গিফো-কেলার।

Advertisement

এর সঙ্গে একমত দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারাও। সিউল সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, তাদের বিশ্বাস, উত্তর কোরিয়ার কিছু অঞ্চলে মানুষ অনাহারে মারা যেতে শুরু করেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, করোনাভাইরাস মহামারির আগেও উত্তর কোরিয়ার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা অপুষ্টিতে ভুগছিল। এরপর তিন বছর সীমান্ত বন্ধ ও বিচ্ছিন্নতা সেই পরিস্থিতিকে হয়তো আরও খারাপ করে তুলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যার জন্য কিম জং উনের প্রশাসনই দায়ী। মহামারি চলাকালে পিয়ংইয়ং তার বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা আরও বাড়ায়। তারা চীনের সঙ্গে ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত বরাবর দ্বিতীয় বেড়া তৈরি করে এবং আগে যে সামান্য পরিমাণে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য চলতো, তা আরও কমিয়ে ফেলে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক লিনা ইউনের মতে, জনগণকে খাওয়ানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার সীমান্তগুলো খুলে দেওয়া আবশ্যক। তাদের বাণিজ্য ফের শুরু করতে হবে এবং কৃষির উন্নতি ঘটাতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশটি বিচ্ছিন্নতাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

Advertisement

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক জিন গত সপ্তাহে এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় আলোচনার টেবিলে ফেরা এবং মানবিক সহায়তা গ্রহণ করা।

তবে সিউলের বিশ্বাস, কিম জং উন প্রশাসন জনগণকে খাওয়ানোর পরিবর্তে ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচিতেই বেশি মনোযোগী।

গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রণালয়ের ভাইস মুখপাত্র লি হায়ো-জুং বলেছেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, উত্তর কোরিয়া গত বছর যেসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে, তার খরচ যদি খাদ্য সরবরাহে ব্যবহার করতো, তাহলে ১০ লাখ টনের বেশি খাদ্য কিনতে পারতো। এটি দেশটির বার্ষিক খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য যথেষ্টর চেয়েও বেশি।

সিউলের গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার মতে, বন্যা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত বছর উত্তর কোরিয়ার ফসল উৎপাদন তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত চার শতাংশ কম হয়েছে।

রেঙ্গিফো-কেলারের শঙ্কা, এসব প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি শাসক গোষ্ঠীর ‘ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতি’ আগে থেকেই দুর্ভোগে থাকা উত্তর কোরীয় জনগণের ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, সব লক্ষণ একটি অবনতিশীল পরিস্থিতির দিকেই ইঙ্গিত করছে। তাই নিশ্চিত, উত্তর কোরিয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে খুব বেশি কিছু লাগবে না।

কেএএ/