২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনের বিদায়ের পর রাত ১২:০১ মিনিটে শুরু হলো স্বাধীনতার মাস। যা ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হয়ে আজ অবদি চলে আসছে। ‘স্বাধীনতা’ এমন একটি শব্দ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের সকল অধিকারের প্রশ্ন। এমনকি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যও স্বাধীনতা এক জরুরি বিষয়। তাইতো এ স্বাধীনতা মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক মহানিয়ামাত।আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টির সেরা জীবরূপে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়ে অত্যন্ত সম্মানিত করেছেন। তাই মানুষ স্বাভাবিক এবং সঙ্গত কারণেই স্বাধীনচেতা। কোনোভাবেই পরাধীনতার শৃঙ্খল মেনে নিতে চায় না। তাছাড়া ইসলাম ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় তথা কোনো ধরনের পরাধীনতাকে সমর্থন করে না। তাই মানবজীবনে অর্জিত স্বাধীনতা ও তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার গুরুত্ব অত্যাধিক।ইসলাম মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৈৗমত্ব রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করাই নয় বরং জোরালো তাগিদ দিয়েছে। আর ইসলামের অন্যতম লক্ষ হচ্ছে সমাজ থেকে অন্যায়ের মূলোৎপটন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। জুলুম অত্যাচার বন্ধ করে মানুষের জন্য সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত স্বাধীন সমাজ বিনির্মাণ করা। কারণ পরাধীনতা শৃঙ্খল মানবজীবনে শোষণ, নির্যাতন, অন্যায়-অচিবার ও জুলুম অত্যাচারের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই ইসলাম দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং তার সার্বভৈৗমত্বকে ধরে রাখতে জীবনদানকে শাহাদাতের মর্যাদা প্রদান করেছে। যারা দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে নিজেদের জীবনের তাজা রক্তকে এ মাটিতে বিলিয়ে দিয়েছে তারা লাভ করেছে শহীদী মর্যাদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করার পর মদিনাকে নিজের মাতৃভূমি হিসেবে গণ্য করেন এবং মদিনার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মদিনার সকল নাগরিককে নিয়ে মদিনা রাষ্ট্রের সুরক্ষার জন্য তাঁকে অনেক প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়েছে।সুতরাং যারা দেশের জন্য, দেশের ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করে মজলুম জনতার দাবি আদায়ের স্বার্থে লড়াই করেছিল, তাদের লড়াই ছিল আল্লাহর পথে লড়াই করারই নামান্তর। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্মানার্থে কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদের তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৪)১৯৭১ সালে জুলুম নির্যাতনের স্বীকার নিরস্ত্র আপামর জনতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মাতৃভূমি রক্ষার জন্য যে সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে তারাও শহীদ। হাদিসে এসেছে ‘দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ’।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেশের সীমানা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয়া পৃথিবী ও তার মধ্যকার সব কিছুর চেয়ে উত্তম।’অন্য হাদিসে এসেছে- ‘মৃত ব্যক্তির সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তার আমল আর বৃদ্ধি হতে পারে না। তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্নোত্তর থেকেও সে মুক্ত থাকবে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)পরিশেষে...স্বাধীনতা লাভের মাসের প্রারম্ভে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। রাষ্ট্রসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে দাবি জানাই সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের।স্বাধীনতা শহীদদের নামে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান করে তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেয়া এবং সাদকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা করা সরকার ও প্রতিটি নাগরিকের ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে স্বাধীনতার এ অর্জন এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবদান রাখার তওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এবিএস
Advertisement