ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টরিয়াল টিমের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ভাসমান অবৈধ দোকান বসিয়ে বছরে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য সাবেক সহকারী প্রক্টর এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহাকে সদস্য-সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই কমিটি গঠন করেন। কমিটির অপর সদস্য হলেন রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. দিলারা জাহিদ।
উত্থাপিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত কমিটির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রক্টরিয়াল টিমের বিরুদ্ধে যে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত কমিটির কাছে পেশ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
Advertisement
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিন শতাধিক ভাসমান দোকান থেকে মাসিক ও দৈনিক হারে বিভিন্ন পরিমাণে চাঁদা নেয় প্রক্টরিয়াল টিম। চাঁদাবাজির টাকা তোলেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। ওই টাকায় ভাগ বসান প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা থেকে সর্বনিম্ন পদের কর্মচারী। বাৎসরিক এ চাঁদার পরিমাণ ৪৮ লাখ টাকার মতো। এ টাকা শুধু স্থায়ীভাবে ভাসমান দোকানগুলো থেকে নেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন দিবসে আসা হরেক রকমের দোকন থেকে নেওয়া হয় বিশেষ চাঁদা।
ভাসমান দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকানের পণ্য অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ ভিন্ন হয়। দোকানপ্রতি মাসিক এক হাজার থেকে দশ হাজার টাকা ভাড়া নেয় বলে জানা যায়। ফুচকার দোকান থেকে দোকানপ্রতি মাসিক হারে দুই হাজার ২০০ টাকা করে তোলা হয়। ৩২টির মতো এরকম ফুচকার দোকান আছে। সে হিসাবে ফুচকার দোকান থেকে ৭০ হাজার টাকার বেশি পায় প্রক্টরিয়াল টিম। ভাজাপোড়ার দোকান থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা করে নেয় টিম। ক্যাম্পাসে এরকম দোকান আছে ২৭টি।
এছাড়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগের সামনে বসা ১৫টি দোকান থেকে দৈনিক দুইশ টাকা করে মাসিক ৯০ হাজার টাকা চাঁদা তোলে ঢাবির প্রক্টরিয়াল টিম। টিএসসি এলাকার মমোর দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এরকম আটটি দোকান আছে। তার মধ্যে তিনটি দোকান থেকে টাকা নেওয়া হয়। কার্জন হলের সামনে ৪০টিরও বেশি বাহারি গাছের চারার দোকান রয়েছে। এসব দোকানের মালিক সমিতি থেকে এককালীন মাসিক ১৬ হাজার টাকা নেয় টিম। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে চা, ভাতের হোটেল, ফল, বিছানার দোকানসহ ৩৫টিরও অধিক দোকান আছে। সেখান থেকে মাসিক ১৫ হাাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।
এছাড়া ডাব, ভর্তা, ভুট্টার দোকান আছে ৩০টির মতো। এসব দোকান থেকে মাসিক এক হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। কারুশিল্প, অলংকার, বাহারি খাবার, বই, কাপড়, ফলের দোকান আছে প্রায় একশটি। এছাড়া বিশেষ দিবসগুলোতে (বইমেলা, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, মাতৃভাষা দিবস) আলাদাভাবে চাঁদা নেওয়া হয়।
Advertisement
চাঁদাবাজির এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রক্টর অফিসের টোকেন ম্যান ও প্রক্টরের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক শামীম হোসেন। তার সঙ্গে জাগো নিউজের কথা হলে তিনি চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করেন। তবে ক্যাম্পাসে তার আত্মীয়-স্বজনের দোকান আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
আল-সাদী ভূঁইয়া/কেএসআর/জিকেএস