পতনের মুখে থাকা অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আরও একটি শর্তের সামনে ‘আত্মসমর্পণ’ করলো পাকিস্তান। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য এবার বিদ্যুতের গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সারচার্জ আদায়ের অনুমোদন দিয়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশটি। এটিকেই ‘আইএমএফের শর্তে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন করেছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
Advertisement
চরম অর্থসংকটে ভুগতে থাকা পাকিস্তান বহুদিন ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির সঙ্গে ৬০০ কোটি ডলারের একটি কর্মসূচিতে অংশ নেয় দেশটি। গত বছর এর আকার বাড়িয়ে ৬৫০ কোটি ডলার করা হয়। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত আগস্টে ১১৭ কোটি ডলার ঋণ পায় পাকিস্তান। তবে এতেও বিপদ কাটেনি।
আরও পড়ুন>> আইএমএফের ‘অভাবনীয়’ শর্তে রাজি হওয়া ছাড়া উপায় নেই: পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা দিয়ে বড়জোর তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
Advertisement
এ অবস্থায় চুক্তির বাকি অর্থ ছাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু দফায় দফায় বৈঠকের পরেও ঋণের সব শর্ত নিয়ে একমত হতে পারেনি দু’পক্ষ। কর বাড়ানো, ভর্তুকি বাতিলের মতো একাধিক কঠোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
আরও পড়ুন>> ধনীদের কর বাড়াও, গরিব বাঁচাও
জানা যায়, শর্তগুলো পূরণে পাকিস্তানকে ১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল দাতা সংস্থাটি। সেই মোতাবেক এবার বিদ্যুতে সারচার্জ আদায়ের অনুমোদন দিলো দেশটির অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি (ইসিসি)।
বুধবার (১ মার্চ) পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ বছরের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৮২ রুপি সারচার্জ আদায়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সারচার্জ বা সম্পদ কর হচ্ছে এক ধরনের মাশুল, যা ব্যক্তির সম্পদের দলিলমূল্যের ওপর আদায় করা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন>> আইএমএফ’র শর্ত মানতে গিয়ে পাকিস্তানি রুপির রেকর্ড পতন
জানা গেছে, ঋণছাড়ের জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতের গ্রাহকদের কাছ থেকে ইউনিটপ্রতি গড়ে ২ দশমিক ৬৩ রুপি সারচার্জ নেওয়া অব্যাহত রাখবে পাকিস্তান।
এর আগে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি টেলিভিশনে এক ভাষণে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ স্বীকার করেছিলেন, পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ সহায়তার শর্তগুলো ‘কল্পনাতীত’। তবে চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে এই মুহূর্তে সেসব কঠিন শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
কেএএ/