নিয়ামুর রশিদ শিহাব
Advertisement
মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে আমাদের দেশের অর্ধশতাধিক দেশি ফল হুমকির মুখে। এতে দেশীয় ফলের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও বৈচিত্র্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্ট ও বিদেশি ফলে বাজার সয়লাবের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধিতে বাড়ি-ঘর নির্মাণে নির্বিচারে ফলের গাছ কাটা, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদিকে ঐতিহ্যবাহী দেশীয় ফলের গাছ হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন কৃষিবিদরা। এ ছাড়া বিদেশি ফলের আমদানিও দেশি ফলের উৎপাদন হ্রাস ও হারিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকখানি দায়ী বলে অভিমত তাদের।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ-এ চার মাসেই পাওয়া যায় শতকরা ৫৪ শতাংশ দেশি ফল। বছরের আট মাসে পাওয়া যায় ৪৬ শতাংশ। বর্তমানে দেশে প্রধান ও অপ্রধান মিলিয়ে দেশি ফলের সংখ্যা প্রায় ৬০-৭০টি। এগুলোর মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম, গোলাপজাম, নারিকেল, কুল, তৈকর, বিচিকলা, বিলিম্বি, বেতফল, লেবু, আমলকি, সফেদা, আতা, শরিফা, কাঁচা কলা, ডালিম, জাম্বুরা, সুপারি, বাঙ্গি, তরমুজ, বকুল, বেল, কামরাঙ্গা, জলপাই, চালতা, ডেউয়া, পেঁপে, তেঁতুল, তাল, বেল, গাব, পানিফল, কদবেল, আনারস, খেজুর, জামরুল, কলা, লটকন, আনার, আমড়া, কমলা, অরবরই, সাতকড়া, লুকলুকি, তরমুজ, চুকুর, প্যাসনফল, আঁশফল, মাখনা, আধাজামির, পিচফল, ফসলা, জগডুমুর, কাজুবাদাম, ডুমুর, কাউফল, করমচা, পানিয়ালা, জামির, বৈচি, মুনিয়া, ডেফল, চাম্বুল উল্লেখযোগ্য।
Advertisement
আরও পড়ুন: বেড়েছে তরমুজ চাষ, ভালো বিক্রির আশা কৃষকের
এসবের মধ্যে কাউফল, করমচা, ডেউয়া, আঁশফল, গাব, জগডুমুর, চাম্বুল, আতাফল, ডুমুর, চালতা, অরবরই, বিলিম্বি, শরিফা, সাতকরা, তৈকর, ডেফল, লুকলুকি, বৈচি, মুনিয়া কোনো রকমে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এগুলো গ্রামে দেখা গেলেও শহরে দেখাই যায় না।
কৃষিবিদদের মতে, কৃষিপ্রধান ও উর্বর মাটির গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের ফলগাছের সংখ্যা ছিল শতাধিক। তবে নানা কারণে গত দুই দশকের ব্যবধানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধশতকে। বর্তমানে দেশে ফলের বাজারের শতকরা ৮০ ভাগ দখলে নিয়েছে আমদানি করা বিদেশি ফল। এসব ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, আঙুর, খেজুর, বেদানা, মাল্টা, স্ট্রবেরি, ড্রাগন, নাশপাতি উল্লেখযোগ্য। এসব কেমিক্যাল মেশানো ফল খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁঁকি যেমন বাড়ছে; তেমনি তৈরি হচ্ছে পুষ্টিঘাটতিজনিত সমস্যা।
চিকিৎসকদের মতে, প্রাথমিকভাবে এসব ফল খেয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব দেখা যায় না। তবে পরে তা লিভার সিরোসিস, কিডনি বিকল, মেমব্রেনসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতা রোধ, কঠিন ও জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসেরও কারণ হতে পারে কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল। কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই তৈরি করছে না, পুষ্টিঘাটতিও সৃষ্টি করছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: বরই চাষে ৫ লাখ টাকা আয় করেন আজাদুর
দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টিচাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে দেশি ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষি বিভাগকেও দেশীয় ফলের উৎপাদন ও সম্প্রসারণে আরও অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলেই সগৌরবে টিকে থাকবে দেশীয় ফল।
লেখক: শিক্ষার্থী, কম্পিউটার বিভাগ, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
এসইউ/জিকেএস