যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ১৪ থেকে ১৭ জুলাই আয়োজন করা হবে ৩২তম বাংলা বইমেলা। বিশ্ব দরবারে বাংলা শিল্প সাহিত্য কৃষ্টি সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রয়াসে এতে যোগ দেন বাঙালি কবি, সাহিত্যিক, লেখক প্রকাশক এবং পাঠকরা।
Advertisement
মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ মেলায় যোগ দিতে অন্তত ২৫টি প্রকাশনী সংস্থা নথিভুক্ত করেছে। গতবারের মতো এবারও চার দিনব্যাপী এই বইমেলা বসবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১ মার্চ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ‘নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা ২০২৩’ এর আহ্বায়ক ড. আব্দুন নূর। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি মিনার মনসুর, কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ও উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বইমেলায় অংশগ্রহণকারী ও মেলায় যোগ দিতে ইচ্ছুক প্রকাশকরা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতি বছরের মতো এবারও বই মেলাজুড়ে থাকবে লেখক, পাঠক, প্রকাশক ও নতুন বই নিয়ে আলোচনা, সেমিনার সংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নানা আয়োজন। আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেবেন বাংলা ভাষা, শিল্প, সাহিত্য ও কৃষ্টির আধুনিক চর্চা নিয়ে। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য: বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও কৃষ্টির বিশ্বায়নে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, সারাবিশ্বে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলার পরই সর্বাগ্রে নাম আসে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা’র। মুক্তধারার পথ অনুসরণ করে ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে এবং বিশ্বের বহুদেশে বাংলা বইমেলা আয়োজিত হচ্ছে নানা আঙ্গিকে। নতুন প্রজন্ম সংযুক্ত হচ্ছে ব্যাপকভাবে, যা এই বইমেলার অন্যতম একটি অর্জন।
বইমেলার আহ্বায়ক আব্দুন নূর সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বছরের মতো মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ দেওয়া হবে। এ পুরস্কারের অর্থমান ৩০০০ ইউএস ডলার। গত বছর পুরস্কার পেয়েছিলেন বাংলা ভাষা-সাহিত্যের শক্তিমান গবেষক, লেখক অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ। অভিবাসী নতুন লেখকদের প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে ‘শহীদ কাদরী গ্রন্থ পুরস্কার ২০২৩’। অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা থেকে বিজয়ী শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা সংস্থাকে পুরস্কৃত করা হবে চিত্তরঞ্জন সাহা সেরা প্রকাশনা সংস্থা পুরস্কার ২০২৩।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন ও উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ জানান, ১৯৯৩ সালে ইউপিএল প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো বইয়ের সম্ভার নিয়ে যোগ দেন নিউইয়র্কের বই মেলায়। এরপর প্রতি বছরই বাংলাদেশের প্রকাশনী সংস্থাগুলো যোগ দিচ্ছে এ বইমেলায়।
প্রতি বছর বাংলা ভাষার স্বনামধন্য কোনো কবি, লেখক, শিল্পী বইমেলা উদ্বোধন করে আসছেন। সর্বশেষ বই মেলার ক্রম অনুযায়ী উদ্বোধকদের একটি তালিকা এখানে দেওয়া হলো: অমর মিত্র, কবি আসাদ চৌধুরী, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম (ভার্চুয়াল), ফরিদুর রেজা সাগর, রামেন্দু মজমুদার, পবিত্র সরকার, সেলিনা হোসেন, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, শামসুজ্জামান খান, তপন রায়চৌধুরী।
Advertisement
সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক, রফিক আজাদ, গোলাম মুরশিদ, সমরেশ মজুমদার, আনিসুজ্জামান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনিসুল হক, আবদুন নূর, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রাবেয়া খাতুন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, সমরেশ সজুমদার ও ইমদাদুল হক মিলন, আবদুল মতিন, দিলারা হাশেম, সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, পূরবী বসু, আবদুল গাফফার চৌধুরী, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শহীদ কাদরী এবং জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা গত ৩১ বছর ধরে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে একক প্রয়াসে। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো ও দুই দিনব্যাপী বইমেলার গোড়াপত্তন করে মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক ও বাঙালির চেতনা মঞ্চ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একুশকে তুলে ধরা ও বাংলা বইমেলার শুরু করার বিষয়টি ছিল সে সময়ে অনেকটা অচিন্ত্যনীয়।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বিশ্বজিত সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক ফাহিম রেজা নূর, কমিটির সদস্য ডা. ফাতেমা আহমেদ, জাকিয়া ফাহিম, শুভ রায় উপস্থিত ছিলেন।
এমআরএম/এএসএম