ধৃমল দত্ত, কলকাতা:
Advertisement
পশ্চিমবঙ্গে এখন এক আতঙ্কের নাম অ্যাডিনোভাইরাস। রাজ্যজুড়ে শিশুদের মধ্যে এর সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত, তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কলকাতার হাসপাতালগুলোর সামনে দেখা যাচ্ছে অভিভাবকদের ভিড়। প্রত্যেকের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। শুধু কলকাতা নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাসহ উত্তরবঙ্গেও একই দৃশ্য।
পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত দু’মাসে অন্তত ৪২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কেবল কলকাতা শহরেই প্রাণ হারিয়েছে চারটি শিশু।
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে চার বছরের একটি শিশুকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে কলকাতার বিধানচন্দ্র রায় (বি সি রায়) হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। বুধবার ভোরে মারা গেছে শিশুটি।
Advertisement
বারাসাত পৌরসভার নবপল্লীর বাসিন্দা এক গৃহবধূ গত রোববার বারাসাত হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেন। জন্মের পরপরই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোববার কলকাতার বি সি রায় হাসপাতালে এনে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় নবজাতককে। বুধবার সকালে সেও চলে যায় পরপারে।
হুগলি জেলার চুঁচুড়ার হামিদপুরের সাত মাসের একটি শিশুর শ্বাসকষ্ট ও জ্বর থাকায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। বুধবার ভোরে মারা গেছে সে।
হাওড়ার বাগনানের একটি শিশুর জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে শিশুটিকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। সেখানে তার শরীরে অ্যাডিনোভাইরাসের নমুনা মেলে। গত মঙ্গলবার মৃত্যু হয়েছে শিশুটির।
কলকাতার মতো গোটা পশ্চিমবঙ্গেই শিশুদের মধ্যে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। কলকাতায় গত পাঁচদিনে মোট ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে এর আক্রমণে। হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ শিশুর শরীরেই জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন।
বুধবার স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, আমাদের কলকাতার হাসপাতালগুলোতে চাপ রয়েছে। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে নতুন করে ৭০টি বেড চালু করা হচ্ছে। যত শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকের কো-মর্বিডিটি রয়েছে। কম ওজনের সমস্যাও রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশ্নে আমরা আত্মবিশ্বাসী। রোগীকে স্থিতিশীল করে রেফার করার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
কেএএ/