ক্যাম্পাস

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: আরও এক অভিযুক্তের নাম জানা গেলো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটিগুলো। এরইমধ্যে পাঁচ ছাত্রীর আবাসিকতা বাতিল করেছে হল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এদিকে হাইকোর্টের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শারমিন আক্তার লিমার নাম অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন তিনি।

এ বিষয়ে লিমা বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। সেখানে আমি ছিলাম না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’

আরও পড়ুন: ইবির ঘটনায় প্রভোস্টের অবহেলা-প্রক্টরের উদাসীনতা ছিল

Advertisement

আদালতে উপস্থাপন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্য, ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশেই ফুলপরীকে র‍্যাগিং ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি হালিমা আক্তার উর্মি, ইসরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জাহান জড়িত ছিলেন এবং ঘটনার সময় লিমা ভুক্তভোগীর ফোন কেড়ে নেন।

এছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইল ফোনে কথা হয়। সেই ফোনে আল আমিন নামে একজন হুমকি দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অন্তরার নির্দেশে নির্যাতন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও বলা হয়।

আরও পড়ুন: অন্তরার নির্দেশে ফুলপরীকে মারধর, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ

Advertisement

এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কোনোরকম অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না। অভিযোগ পাওয়া মাত্র তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে সত্যতাও পেয়েছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর এরইমধ্যে স্থায়ীভাবে হলের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসা মাত্রই তদন্ত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ভিসির কাছে নোট উপস্থাপন করি। তদন্ত চলাকালে ভিকটিমের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি উদাসীনতা বলা হয় তাহলে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছু বলার নেই।’

এদিকে এতদিন চুপচাপ থাকলেও মুখ খুলেছেন অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তবে র‍্যাগিংয়ের বিষয়টি এখনো অস্বীকার করেই যাচ্ছেন তিনি।

অন্তরা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। আমি অন্য অনুষ্ঠানে ছিলাম, তার প্রমাণও আছে।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুদফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ আরও সাত-আট জন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন ফুলপরী

ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ।

এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই মাঝে গত ১৮, ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কমিটির ডাকে মোট তিনবার পৃথকভাবে ক্যাম্পাসে এসে সাক্ষাৎকার দেন ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা।

২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে ঘটনার তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে ছাত্রলীগের গঠিত কমিটি। এছাড়া সোমবার হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।

রুমি নোমান/এসজে/জেআইএম