জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
Advertisement
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড, বৈশ্বিক উষ্ণতা, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে বিভিন্ন রোগ, তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রার চাপ, বায়ুদূষণ এবং খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সমস্যা বাড়ছে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ- আইসিডিডিআর,বিতে ‘স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ও প্রকল্প প্রধান ড. পিটার কিম স্ট্রিটফিল্ড জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য তথা জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে সে সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
Advertisement
তিনি বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্যের ঘাটতির বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাস্তবসম্মত ও রিয়েল-টাইম তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।
এসময় তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি। এর ফলে যেসব নেতিবাচক প্রভাব সারা বিশ্বে পড়বে, তার সবকিছুই বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এতে করে পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু অঞ্চল নিকট ভবিষ্যতে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। এর কারণে লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি শিল্প কারখানায় পণ্য ও কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।
ড. পিটার কিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যের ওপরও বড় প্রভাব পড়ছে। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ুদূষণ বাড়ছে।
আইসিডিডিআর,বির এইচএসসিএসডির গবেষণা কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কিত জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি একটি তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট চালু করেছে। ওয়েবসাইটটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণালব্ধ ফলাফলের জন্য একটি ওয়ান-স্টপ রিসোর্স হিসেবে কাজ করবে।
Advertisement
তিনি বলেন, ওয়েবসাইটের গঠন, বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতা প্রদর্শনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বায়ুপ্রবাহের গুণগত মানের রিয়েল-টাইম তথ্য প্রদানের সক্ষমতা প্রদর্শন করে। যা কি না মহাখালীভিত্তিক একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় হালনাগাদ করা হয়।
ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে আইসিডিডিআর,বির রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর মাহিন আল নাহিয়ান বলেন, ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য ও সরঞ্জাম সম্পর্কিত ধারণা দেয়। এরমধ্যে ভেক্টর বাহিত রোগ, তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রার চাপ, বায়ুদূষণ ও খাদ্য নিরাপত্তার সব তথ্য পাওয়া যাবে।
এরই ধারাবাহিকতায় জলবায়ু বিপর্যয়, যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরা, স্থানীয় এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত কারণগুলোর তথ্য, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড, বৈশ্বিক উষ্ণতা, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, এল-নিনো/লা-নিনা, ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোল ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত থাকবে ওয়েবসাইটিতে।
এসময় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি আইসিডিডিআর,বি টিমকে এমন একটি ওয়েব-রিসোর্স তৈরির জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, নীতি-নির্ধারকদের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ওয়েবসাইট একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
এএএম/এমকেআর/এমএস