ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিরোধ নিরসনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন নতুন একটি চুক্তি করতে একমত হয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, ‘উইন্ডসর ফ্রেমওয়ার্ক’ নামের নতুন এ চুক্তি উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করবে ও ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু করবে।
Advertisement
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিম লন্ডনের একটি হোটেলে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুরা ফন ডার লিনের সঙ্গে বৈঠক করেন সুনাক। বৈঠক শেষে উইন্ডসরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সুনাক ও ফন ডার লিন।
আরও পড়ুন>> যা যা রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড ব্রেক্সিট চুক্তিতে
সেসময় ঋষি সুনাক বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি। উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাণিজ্য নিয়ম সহজ করার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। পাশাপাশি তারা কী নিয়ম অনুসরণ করবে, তা ঠিক করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের সম্পর্কের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা।
Advertisement
আরও পড়ুন>> টমেটো নিয়ে কাড়াকাড়ি যুক্তরাজ্যে
আয়ারল্যান্ড আলাদা একটি রাষ্ট্র হলেও, উত্তর আয়ারল্যান্ড এখনো যুক্তরাজ্যের অংশ। আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে নিবিড় বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি দুই অঞ্চলের মধ্যে কোনো সীমান্তও নেই।
তবে আয়ারল্যান্ড ইইউর সদস্য হওয়ায় একক বাণিজ্য নীতি মেনে চলে। যুক্তরাজ্য ইইউর সদস্য থাকা অবস্থায় একক বাণিজ্য নীতিতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু, ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ায় অর্থাৎ ব্রেক্সিটের পর আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক কী হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন ওঠে তার মধ্যে অন্যতম ছিল, উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য বাণিজ্য নীতি কী হবে ও দুই আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারিত হবে কি না। সীমান্ত নির্ধারিত হলে সেটা আবার ১৯৯৮ সালে হওয়া যে শান্তি চুক্তি উত্তর আয়ারল্যান্ডে দীর্ঘ তিন দশকের সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান ঘটিয়েছিল সেটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
Advertisement
আরও পড়ুন>> ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনের আহ্বান ঋষি সুনাকের
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, উত্তর আয়াল্যান্ড বিষয়ে ইইউর সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে পারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের বড় একটি অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও চার মাস আগে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসা সুনাক ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে, ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ে ইইউ’র সঙ্গে নতুন চুক্তি ঋষি সুনাকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, তার দল কনজারভেটিভ পার্টিই ব্রেক্সিটের পক্ষে বেশি প্রচার চালিয়েছে। তাই ইইউর সঙ্গে সমঝোতার এ সম্পর্ক কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের পছন্দ নাও হতে পারে।
নানা সংকটের কারণে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি৷ জনমত জরিপে বিরোধী লেবার পার্টি অনেক এগিয়ে৷ ব্রেক্সিট চুক্তির সংশোধনকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে জনপ্রিয়তার ব্যবধান কমাতে চান দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী৷
আরও পড়ুন>> ১০০ বছর পর গন্তব্যে চিঠি, হতবাক বাসিন্দারা
তবে ইইউর সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কিছু বাস্তব সমস্যা দূর হলেও, উত্তর আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্যপন্থি ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) আবারও ক্ষমতা বণ্টনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে৷ তাই এ চুক্তির সাফল্য নির্ভর করবে, ডিইউপি ক্ষমতা ভাগাভাগি ব্যবস্থা বয়কটের অবসান ঘটাতে রাজি হবে কি না তার ওপর, যা ১৯৯৮ সালের শান্তি চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ফন ডার লিন এ চুক্তির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের সব পক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷ তার মতে, নতুন এ চুক্তি উভয় পক্ষের বাজার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। যদিও চুক্তিটি উত্তর আয়ারল্যান্ডের অচলাবস্থা কাটাতে ও যুক্তরাজ্যে অঞ্চলটির সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন>> দুই ব্রিটিশ নাগরিকের মরদেহ ইউক্রেনে ফিরিয়ে দিলো রাশিয়া
২০১৬ সালে গণভোটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ ত্যাগের পক্ষে রায় দেয়। তার পরপরই কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে ব্যাপক বিভাজন দেখা দেয়, যা দেশটির সরকারি কাজকর্ম ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স
এসএএইচ