আইন-আদালত

কনডেম সেলে কী কী ব্যবস্থাপনা জানতে চান হাইকোর্ট

দেশের কারাগারগুলোর ভেতরে কনডেম সেলের ভেতরে কী কী ব্যবস্থাপনা আছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজিপ্রিজন) প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ৪ এপ্রিল এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

কনডেম সেলে কতজন রয়েছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন সমেরন্দ্রনাথ।

আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, কারাগারের একটি মৃত্যু সেলের ভেতরে কী কী ব্যবস্থাপনা আছে সে বিষয়ে সুনিদিষ্টি তথ্যসহ রিপোর্ট দিতে কারা মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে এ সংক্রান্ত বিষয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে মোট দুই হাজার ১৬২ জন বন্দি রয়েছে বলে প্রতিবেদন আসে। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ‘কারাগারসমূহে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের তথ্য’ শীর্ষক কারা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদির এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।

Advertisement

গত বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত তৈরি করা এ প্রতিবেদন মতে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য সেলের সংখ্যা মোট দুই হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য দুই হাজার ৫১২টি, আর মহিলাদের জন্য ১৪৫টি।

মোট দুই হাজার ৬৫৭টি সেলের মধ্যে বন্দি রয়েছে দুই হাজার ১৬২ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দির সংখ্যা দুই হাজার ৯৯ এবং মহিলা রয়েছে ৬৩ জন।

এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে। এক হাজার ৭৮৪টি সেলের মধ্যে এ বিভাগে মোট বন্দি রয়েছে এক হাজার ২৯৫ জন। আর সর্বনিম্ন সেল রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। ওই বিভাগে ৫৪টি সেলের মধ্যে মোট বন্দি রয়েছে মাত্র পাঁচ জন। সেখানে কোনো মহিলা বন্দি নেই।

কারাগারের মধ্যে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে এক হাজার সেলের মধ্যে রয়েছে ৯৫১ জন বন্দি। তবে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে সেল থাকলেও কোনো বন্দি নেই। আর সেল নেই ঠাকুরগাঁও এবং কুড়িগ্রাম জেলায়।

Advertisement

এ প্রতিবেদন দাখিলের পর সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি মৃত্যুর সেলের ভেতরে কী কী ব্যবস্থাপনা আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। একই সঙ্গে পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ এপ্রিল দিন রেখেছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী শিশির মনির।

২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। আদালতে রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।

পরে দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ও কনডেম সেলের সংখ্যাসহ কনডেম সেলের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট।

রিটের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।

তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে।

কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস