যে ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাকে আগে থেকে অনুসরণ করে। এরপর তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে। কথা বলার এক পর্যায়ে তাকে সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যায়। আর সেখানে চক্রের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত থাকে। চক্রের একজন সদস্য ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় এবং মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে আসলে বলে, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজ কেউ একজন সেরে ফেলে।
Advertisement
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ এর কার্যালায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
রাজধানীর কোতোয়ালী, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোর রাত পর্যন্ত র্যাব-৩ এর কয়েকটি আভিযানিক দল একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।
Advertisement
আরও পড়ুন: নারী পকেটমারদের টার্গেট পুরুষ, শিশুদের টার্গেট নারী
গ্রেফতাররা হলেন- মোহাব্বত মিয়া (৪০), মো. মাসুম (৩৫), ফজল খাঁ (৩২), মো. সাইফ (৩০), মো. আকাশ (২৪), মো. আবু বকর (২১), মো. নজরুল ইসলাম (৪০), মো. আলমগীর (২২), মো. জাহাঙ্গীর (২৮), মো. সোহেল (১৯), মো. সোহেল (৩২), মো. সোহানুর রহমান সাগর (২০), মো. মামুন (১৯), লিটন (২১), মো. আলমাস (২৮), সুজন মিয়া (২২), রাকিব (২৫), মো. রিপন (২২), মো. কালাম (৪০), মো. নজরুল ইসলাম (৪০), মো. সুমন মৃধা (২৬), অন্তর হোসেন রবিন (২৪), মো. আব্দুল রসুল (৩৮), মো. কবির (২৫), মো. ছামিদুল রহমান (৩৪), ইকবাল হোসেন (২০) কামরুল (২১), শহীদুল ইসলাম উজ্জল (২৬), মো. কালু (২০), মো. সুমন (২৫), মো. হৃদয় (১৯) ও মো. সাজিদ খান (১৯)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকাসহ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, যে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে এদের তৎপরতা বাড়ে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে এবং একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর লোকসমাগম হয়ে থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
Advertisement
বেশ কিছুদিন ধরে বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক এ চক্রটি রাজধানীর কোতোয়ালী, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা করে এই চক্রটি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অলি-গলিতে ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না।
আরও পড়ুন: ঢাকায় চুরি-ছিনতাই চলছেই
এছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদের টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে ওই ব্যক্তির পেছনে যেতে থাকে।
ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিকশা ও সিএনজি যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়। ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাই করা অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ চক্রের সদস্যদের অধিকাংশেরই রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই।
তারা সবাই রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। চক্রের প্রায় সব সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়ায়।
টিটি/এমআরএম/জিকেএস