মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে বরই চাষ করে এলাকার মডেল হলেন আজাদুর রহমান। তার বাগানে আছে সুস্বাদু কাশ্মীরি আপেল কুল, বাউকুল, জাম্বুকুল এবং ঢাকা-৯০ কুল। এলাকার চাহিদা পূরণের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভাবে সরবরাহ হচ্ছে এ বরই।
Advertisement
কৃষি বিভাগ জানায়, আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য অনুকূলে থাকায় মৌলভীবাজারে চলতি মৌসুমে সুস্বাদু ও মিষ্টি বরই আবাদ হয়েছে। আজাদের বাগানে ভালো বরই চাষ হওয়ায় এলাকার যেমন চাহিদা মিটছে; তেমনি বরই চাষ করে তিনি এলাকার অনেকের কাছে মডেল হয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন বরই চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
জানা গেছে, ২০০১ সালের শুরুর দিকে শমশেরনগরের আজাদুর রহমান ১০ একর জমিতে ঈগল নার্সারি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পর্যায়ক্রমে কাশ্মীরি আপেল কুলসহ বিভিন্ন জাতের বরই চাষ শুরু করেন। কুমিল্লা ও যশোর থেকে চারা আনেন। প্রায় চার ফুট লম্বা আকারের লাগানো গাছে এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: শখের নার্সারিতে রুম্পার সফলতা
Advertisement
আজাদুর রহমান প্রতি বছর ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৫ লাখ টাকা আয় করেন। তার সফলতা দেখে এলাকার লোকজন অবাক হয়ে যান। চলতি মৌসুমে আজাদুর রহমান ঢাকা-৯০ জাতের বরই চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। সরেজমিনে জানা যায়, ১০ একর জমিতে লাগানো বাগানের প্রতিটি গাছে ঢাকা-৯০ কুলে ছেয়ে আছে। ফলের ভারে গাছসহ ডালগুলো নিচের দিকে নুয়ে পড়েছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে প্রতিটি গাছ। পাখির হাত থেকে বরই রক্ষায় পুরো বাগান জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ৫-৭ জন শ্রমিক বরই বাগানে কাজ করছেন।
বাগান মালিক আজাদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর বাগান থেকে ৪-৫ লাখ টাকা আয় হয়। অল্প দিনে বরই চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। বিক্রির পাশাপাশি কলম চারা তৈরি করছি। বিভিন্ন ফল-ফুলের চারাও বিক্রি করি। কাশ্মীরি আপেল কুল, বাউকুল, জাম্বুকুল বিক্রি প্রায় শেষ। এ মৌসুমে টক-মিষ্টি সমৃদ্ধ রসালো ঢাকা-৯০ জাতের বরই প্রতি কেজি ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ১৫০-২০০ কেজি বরই বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়।’
আরও পড়ুন: ২ বছরের পরিশ্রমে মাসে ১৮ লাখ টাকার ফল বিক্রি
বাগান দেখতে আসা শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকার ফয়জুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মতো আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন লোকজন বরই বাগানটি দেখতে আসছেন। আজাদুর এ বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’
Advertisement
বরই কিনতে মৌলভীবাজার থেকে আসা রহিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘শমশেরনগর বিমানঘাঁটি এলাকার বরই খুব মজাদার। তাই অনেক দূর থেকে বরই কিনতে এলাম।’
বরই কিনতে আসা জুয়েল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজাদুর রহমান হলেন এ এলাকার মডেল বরই চাষি। তার দেখাদেখি শমমেরনগর এলাকায় মুন্না সিদ্দিকির হারভেস্ট ফার্মসহ আরও কয়েকটি বাগান গড়ে উঠেছে।’
আরও পড়ুন: এক বাগান থেকেই ২৫ লাখ টাকার কমলা
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জেলায় ৬৫৪ হেক্টর জমিতে বরই আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ও মাটির গুণাবলি ভালো থাকায় বরইর ফলন ভালো হয়েছে। শমশেরনগরে আজাদুর রহমানের বাগানের বরইগুলো খুবই সুস্বাদু এবং মিষ্টি। তার বাগান দেখে অনেক বেকার যুবক বরই বাগান করতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। ভালো ফলনের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
আব্দুল আজিজ/এসইউ/জিকেএস