বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় দশ লাখ অভিবাসী গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে আশ্রয় আবেদন করেছেন, যা ২০১৬ সালের পরে সর্বোচ্চ। সম্প্রতি সর্বোচ্চ আশ্রয় আবেদনের রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশিরাও।
Advertisement
২০২২ সালে ইইউ প্লাস (ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড) দেশগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নয় লাখ ৬৬ হাজার অভিবাসী আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এই সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি এবং ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় আবেদন সংক্রান্ত সংস্থা-ইইউএএ বুধবার এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
এর বাইরে গত বছর প্রায় ৪০ লাখ ইউক্রেনীয় সাময়িক সুরক্ষার আওতায় ইউরোপে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইউক্রেনীয়দের সাময়িক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে গিয়ে গোটা আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ার ওপরই বড় ধরনের চাপ পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নতুন আগতদের জায়গা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে।
কোন দেশ থেকে কত
Advertisement
অনিয়মিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে প্রবেশের পর অভিবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশে আশ্রয়ের আবেদন জানাতে পারেন। প্রথমবার আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারেন। ২০২২ সালে আট লাখ ৮৫ হাজার জনই প্রথমবার আশ্রয়ের আবেদন জমা দিয়েছেন। পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন প্রায় ৮০ হাজার।
আবেদনকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৩ হাজার জনই ছিলেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক, যা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০২১ সালের ধারাবাহিকতায় গত বছরে আশ্রয় চাওয়াদের দুই তৃতীয়াংশই ছিলেন সিরীয় (এক লাখ ৩২ হাজার) ও আফগানরা (এক লাখ ২৯ হাজার)।
২০১৬ সালের পর দেশ দুইটির নাগরিকদের আবেদনের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ৷ তৃতীয় অবস্থানের আছেন তুরস্কের মানুষ, ৫৫ হাজার আবেদনকারী ছিলেন ইউরোপীয় ইয়নিয়নের সীমান্তবর্তী এই দেশটির। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার মানুষেরা। দেশ দুইটির আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫১ হাজার ও ৪৩ হাজার জন।
প্রায় ৩৪ হাজার বাংলাদেশির আবেদন
Advertisement
২০২১ সালে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি ইইউ প্লাস দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। এবার এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অনিয়মিত উপায়ে আসা ৩৩ হাজার ৭২৯ জন বাংলাদেশির আবেদন জমা পড়েছে ২০২২ সালে, যা পাকিস্তানের নাগরিকদের পর আবেদনের দিক থেকে সপ্তম।
ইইউএএ-এর তথ্য অনুযায়ী, তুর্কি, ভেনেজুয়েলান, কলম্বিয়ান, বাংলাদেশি ও জর্জিয়ানদের আবেদনের সংখ্যা অন্তত ২০০৮ সালের পর সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি
অনেক সময়ই আবেদনের পর সিদ্ধান্ত পেতে শরণার্থী, অভিবাসীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। তবে গত বছর ছয় লাখ ৩২ হাজার আবেদনেরই সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে তিন লাখ ৭৯ হাজার বা প্রায় অর্ধেক আবেদনই প্রত্যাখ্যান করেছে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, এক লাখ ৪৭ হাজার জন শরণার্থী হিসেবে এবং এক লাখ ছয় হাজার সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন বা সহায়ক সুরক্ষার আওতায় থাকার অনুমতি পেয়েছেন।
নিজ দেশে বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনৈতিক কারণে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে বা কারো জীবন হুমকির মুখে থাকলে তিনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইউরোপের দেশগুলোতে সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করতে পারেন।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
এমআরএম/জিকেএস