শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতনের প্রতিবাদে মতিঝিলের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা এক ঘণ্টার বেশি সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।
Advertisement
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর পর দরপতন দেখা দিলে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ব্রোকারেজ হাউজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন বিনিয়োগকারীরা।
মতিঝিলে অবস্থিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিনিয়োগকারীরা। সেখানে লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন তারা।
‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মতিঝিলের রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান শেষে বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল ১২ দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।
Advertisement
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছে তাতে প্রতিদিন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারাচ্ছেন। বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। আজ আমরা ডিএসইর আগের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে এক ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। অবস্থান কর্মসূচি পালন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন>> শুরুতে পতনে শেয়ারবাজার, লেনদেনে ধীরগতি
শেয়ারবাজারে ২০১০ সালে মহাধস নামলে বিনিয়োগকারীরা নিয়মিত রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতেন। এমনকি ২০১৯-২০ সালেও রাস্তায় নেমে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
দিনের পর দিন বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করায় ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট ডিএসইর পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
Advertisement
ওই জিডি বলা হয়, ২৭ আগস্ট আনুমানিক দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ পুঁজিবাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ৯/১০ জন লোক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের সামনে ব্যানার ও মাইকসহ বিক্ষোভ করেন।
‘যার ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াত এবং অফিসের স্বাভাবিক কর্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে।’
এতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বেশকিছু দিন যাবৎ তারা এ ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন এবং পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মনে করে এ ধরনের কার্যকলাপ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে- বলে সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের প্রাচীন বৃহৎ পুঁজিবাজার। একটি জাতীয় ও জনস্বার্থমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে দৈনিক এখানে হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটে।
‘অতএব, বিষয়টি বিবেচনা করে পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ ব্যাপারে আপনার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাধিত করবেন।’
ডিএসইর পক্ষ থেকে এ সাধারণ ডায়েরি করা হলে বন্ধ হয়ে যায় বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ। এর মধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যানসহ কমিশনার নিয়োগ দেয় সরকার।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মেলে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ ও রাস্তায় নামর বিষয়টি অনেকটাই ভুলে যায়। কিন্তু কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন চলছে।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এতে সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি কমে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে কমে বাজার মূলধন।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন>> পুরোনোদের বাদ দিয়ে ডিএসইতে নতুন চার স্বতন্ত্র পরিচালক
অপরদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমে ৪১ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমে ২ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা দশমিক ১৩ শতাংশ। ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমে ১০ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয় ২৭৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমে ১৪৯ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেন শুরু হতেই শেয়ারবাজারে বড় দরপতনের আভাস পাওয়া যায়। লেনদেনের প্রথম ঘণ্টাতেই দরপতনের তালিকায় নাম লেখায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান। এরপর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা।
এমএএস/ইএ/জেআইএম