নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আজানের পর দোয়া পাঠকারীর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ পুরস্কার। মুয়াজ্জিনের আজান শুনে উত্তর দেওয়া এবং আজানের পর দেয়া পড়ার ফজিলত অত্যাধিক। কী সেই দোয়া ও ফজিলত?
Advertisement
মদিনায় হিজরতের পর আজানের প্রচলন হয়। আজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন যে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বকরি চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালোবাস। তাই তুমি যখন বকরি চরাতে থাকো বা বন-জঙ্গলে থাকো তখন উচ্চকন্ঠে আজান দাও। কেননা, জিন, ইনসান বা যেকোনো বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনবে, সে কেয়ামতের দিন তার পক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একথা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে শুনেছি।’ (বুখারি ৫৮২)
আজানের পর দোয়া ও মুনাজাত মূলত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরুদ ও প্রশংসা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠ ও প্রশংসায় মিলবে পরকালের সুপারিশ। মুমিনের জন্য এটি সবচেয়ে বড় পুরস্কার। হাদিসের বর্ণনায় এসব ফজিলত, দরুদ ও দোয়া ওঠে এসেছে এভাবে-
১. হজরত জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
Advertisement
আজানের দোয়া:
اللَّهُم ربِّ هذه الدَّعْوَة التَّامة، والصَّلاة القَائمة، آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةِ وَالفَضِيلة، وابْعَثْه مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذي وعَدْتَه
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াছ ছালাতিল ক্বায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবাআছহু মাক্বামাম্ মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আত্তাহ।‘
আজানের দোয়ার অর্থ: : ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও আসন্ন ছালাতের তুমি মালিক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওয়াসিলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন। এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত কর। যার ওয়াদা তুমি করেছ।’
Advertisement
কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাওয়ার অধিকারী হবে।’ (বুখারি, মিশকাত)
আজানের পর দরুদ পড়া২. আরেক হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে, তখন সে যেরূপ বলে, তদ্রূপ বলবে। এরপর আমার ওপর সালাত (দরুদ) পাঠ করবে; করণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার সালাত (দরুদ) পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ১০ বার সালাত (রহমত) প্রদান করবেন।
৩. হজরত সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
أَشْهَدُ أَنَّ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رضيت بالله ربًا وبمحمد ﷺ رسولًا وبالإسلام دينًا
উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসুলাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি।’
তার গুনাহসমূহ মাফ করা হবে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)
আজানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের গুনাহ ক্ষমা করে পরকালে তার সুপারিশ দিয়ে ধন্য করবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আজানের উত্তর দেওয়াসহ দোয়া ও দরুদের মাধ্যমে নবিজির সুপারিশ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম