রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উভয় পক্ষের হাজার হাজার সেনা প্রাণ হারিয়েছে। ইউক্রেনে মৃত্যু হয়েছে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের। ধ্বংস হয়ে গেছে ছোট-বড় বহু শহর। এই সংঘাতের জেরে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বে। প্রতিটি দেশেই বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। আজ এক বছর পরেও সেই যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। বরং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
Advertisement
ইউক্রেনের পাঁচভাগের একভাগ এলাকা বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। যদিও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলছেন, তাদের ভূমি থেকে রুশ সৈন্যদের সরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইউক্রেনের। এমনকি প্রায় নয় বছর আগে হাতছাড়া হওয়া ক্রিমিয়াও দখলমুক্ত করবেন বলে আশাবাদী জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সামরিক অভিযান’ শুরুর এক বছর পূরণের আগে গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার সেই ভাষণে যুদ্ধ বন্ধের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য নিউ স্টার্ট চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আকস্মিক ইউক্রেন সফরের প্রতিক্রিয়া এভাবেই জানিয়েছেন পুতিন।
Advertisement
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামাকয়েকদিন আগে রুশ প্রেসিডেন্টের সাবেক মুখপাত্র এবং মস্কোর ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের পরিচালক সের্গেই মারকভ বিবিসি’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইউক্রেনে এখন যে যুদ্ধ চলছে, সেটি মূলত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর যুদ্ধ। তার মতে, ইউক্রেনের এই ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ই কার্যত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ অবশ্য ইউক্রেন যুদ্ধকে এখনই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলতে রাজি নন। তবে এমন আশঙ্কার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
ইফতেখার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটি হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়। কিন্তু এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যে মেরুকরণ দেখতে পাচ্ছি, তাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপের অনেক দেশই কিন্তু পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। রাশিয়ার অনেক নীতিনির্ধারকও মনে করেন, তারা এখন পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়ছেন। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটা হুমকি যে তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
শান্তি ফিরবে কবে?ডয়েচে ভেলের খবর অনুসারে, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ বাড়ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করে, অবিলম্বে কূটনৈতিক পর্যায়ে শান্তি আলোচনা শুরু করা দরকার।
Advertisement
জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলের রাজনীতিবিদ ওয়াগেনকানেক্ট এবং নারীবাদী অ্যালিস সোয়ারজার দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে আলোচনায় বসতে হবে এবং ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের সাহায্যে ইউক্রেন হয়তো ছোট ছোট লড়াইয়ে জিততে পারে। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্রধর দেশকে হারাতে পারবে না। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এ সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্রে সই করেছেন।
তবে জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এই উদ্বেগ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। তার মতে, ইউক্রেন তো এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই রয়েছে।
কেএএ/এমএস