আন্তর্জাতিক

পুতিন কি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন?

এক বছর আগে আজকের দিনটিতে (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২) ঘুম থেকে উঠে গোটা বিশ্ব জেনেছিল, ইউরোপে আবার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইউক্রেনে ভোরের আলো ফোটার আগেই আঘাত করছিল একের পর এক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র, শহর ছেড়ে পালাচ্ছিল হাজার হাজার মানুষ।

Advertisement

তার কিছুক্ষণ পরেই ক্রেমলিন থেকে আসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কঠোর হুঁশিয়ারি, ‘আমাদের কাজে যারাই বাধা দেবে বা আমাদের হুমকি দেবে, তাদের জেনে রাখা উচিত, রাশিয়া সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেবে। এর এমন পরিণতি হবে, যা ইতিহাসে কেউ কখনো দেখেনি।’

শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল, পরাক্রমশালী রাশিয়ার আক্রমণ ইউক্রেন হয়তো বেশিদিন প্রতিরোধ করতে পারবে না। কিন্তু বিশ্ব অবাক চোখে দেখছে, একদিন-দুদিন করে সেই যুদ্ধ এখন এক বছরে পা দিয়েছে। ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থি সরকার টিকে রয়েছে, দেশের বেশিরভাগ অংশ আজও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে।

আরও পড়ুন>> রুশ সেনা প্রত্যাহারে জাতিসংঘে ভোট, বিরত বাংলাদেশ-ভারত-চীন

Advertisement

বিপরীতে, হাজার হাজার সৈন্য নিহত এবং বিপুল সংখ্যক যুদ্ধ-সরঞ্জাম হারিয়েছে রাশিয়া। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন কি লক্ষ অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন?

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, এই যুদ্ধ শুরুর সময় রাশিয়ার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল তিনটি। প্রথমত, কিয়েভের শাসনক্ষমতা থেকে কথিত নাৎসিবাদীদের উৎখাত করা; দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীকে নিরস্ত্র করা; তৃতীয়ত, ইউক্রেন যেন কোনোদিন ন্যাটোর সদস্য হতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা।

‘নাৎসি বলতে পুতিন কাদের বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে দক্ষিণ ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষী মানুষের বিরুদ্ধে আজভ ব্যাটালিয়ন নামে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি তৎপর ছিল, তাদের নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছে রাশিয়া। কাজেই বলা যায়, প্রথম লক্ষ্য তিনি অর্জন করেছেন।’

আরও পড়ুন>> ইউক্রেন যুদ্ধে বদলে গেছে বিশ্ব রাজনীতির হিসাব-নিকাশ

Advertisement

খারকিভে আহত এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে নিয়ে যাচ্ছেন এক সহকর্মী। ছবি সংগৃহীত

দ্বিতীয় লক্ষ্য, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে নিরস্ত্র করা, সেক্ষেত্রে তো রাশিয়া সফল হয়নি?

সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, যুদ্ধে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও ইউক্রেনীয় বাহিনীও কিন্তু যথেষ্ট দুর্বল হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটো জোটের কাছ থেকে বিপুল সামরিক সহায়তা পেয়েছে, আরও পাবে বলে প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি যদি বাস্তবায়িত হয়, ইউক্রেনের বাহিনী আরও কিছু দিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবে। সুতরাং বলা যেতে পারে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন>> যেভাবে যুদ্ধ চলতে পারে ২০২৩ সালে

‘তৃতীয়ত, ইউক্রেন কিন্তু এখনো ন্যাটোয় যোগ দিতে পারেনি। যতদিন সেখানে যুদ্ধ চলছে, ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকছে। ততদিন হয়তো ইউক্রেন এই সামরিক জোটের সদস্য হতে পারবে না। কাজেই বলা যেতে পারে, রাশিয়া তার কিছু লক্ষ্য অর্জন করেছে, কিছু পারেনি।’

রাশিয়াকে কি একঘরে করা গেছে?ইউক্রেন আক্রমণের পরপরই মস্কোর ওপর পশ্চিমা দেশগুলো যে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তার লক্ষ্য ছিল রাশিয়াকে দুর্বল করা এবং একঘরে করে ফেলা। শুরুতে রুশ অর্থনীতিতে এর বিরাট ধাক্কা লেগেছিল। পশ্চিমা কোম্পানিগুলো যখন একে একে রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করে, মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো কঠিন করে তোলা হয়, তখন রুশ মুদ্রা রুবলের মানে বিরাট ধস নামে।

অন্যদিকে, ইউরোপের যেসব দেশ এতদিন ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল, তারা একের পর এক এই সামরিক জোটে যোগ দেবে বলে ঘোষণা দিতে থাকে। তাহলে, যুদ্ধের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন- ন্যাটোর বিস্তার ঠেকানো, তার কি উল্টো ফল হয়নি?

সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য রাশিয়ার বিপক্ষে চলে গেছে কি না, তা নিয়ে দু’ধরনের মতামতই রয়েছে।

আরও পড়ুন>> বছরপূর্তিতে সম্ভাব্য রুশ হামলার জন্য প্রস্তুত ইউক্রেন

পুতিনের পাশে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি সংগৃহীত

‘একদিকে ন্যাটো বলছে, রাশিয়া প্রচণ্ডভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে; সামরিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক- সব দিক দিয়ে। বৃহৎ সামরিক শক্তি হিসেবে রাশিয়ার যে বিশাল ভাবমূর্তি ছিল, সেটি নষ্ট হয়েছে। তাদের সেনাবাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং, রাশিয়া দেখতে যতটা শক্তিধর মনে হয়, কার্যত ততটা নয়।’

এ বিশেষজ্ঞের মতে, ইউরোপের অনেক দেশ এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে গেলেও বাকি বিশ্ব, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো কিন্তু সেভাবে কট্টর অবস্থান নেয়নি। কাজেই রাশিয়া এক ঘরে হয়ে গেছে, এটি বলা যাবে না।’

সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/