লাইফস্টাইল

শিশুর সঠিক বিকাশ হচ্ছে কি না বুঝে নিন ভাষা শুনেই

ডা. সেলিনা সুলতানা

Advertisement

শিশুর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার বিকাশ হতে থাকে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বয়স অনুযায়ী ভাষার বিকাশ ঠিকমতো না হলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

জানতে হবে শিশুটি পিছিয়ে পড়ছে কি না বা তার মধ্যে ভাষার বিকাশের কোন সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হচ্ছে কি না।

আরও পড়ুন: প্রথম দেখায় কি সত্যিই প্রেম হয়? 

Advertisement

শিশুরা সাধারণত তিন বছর বয়সেই কথা বলতে শিখে যায়। সাধারণত এক বছর বয়সে শোনা যায় শিশুর প্রথম কথা। দুই বছরে একসঙ্গে দু’তিনটি শব্দ বলতে পারে ও ধাপে ধাপে আড়াই বছর বয়সে ছোট ছোট বাক্য বলা শুরু করে।

গবেষকদের মতে, শিশুর ভাষা বোঝার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় মায়ের পেট থেকে বা গর্ভাবস্থায়। ঠিক যেভাবে মায়ের হার্টবিটের সঙ্গে শিশুটি পরিচিত হয়, একই ভাবে তার গলার স্বরও বুঝতে পারে ও অন্যদের থেকে আলাদা করতে সক্ষম হয়।

শিশুর জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সে যোগাযোগ করতে শেখে, এক্ষেত্রে কান্না তার ভাষা। দুগ্ধ পান করার সময়ও শিশুর সঙ্গে তার মায়ের ভাষার একটি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বিভিন্ন ধরনের শব্দ দ্বারা তা চলতে থাকে প্রথম আট সপ্তাহ বা দুই মাস পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: একনাগাড়ে হাঁচি হলে থামাবেন যেভাবে 

Advertisement

দুই মাস পরে তার শব্দ বা ধ্বনিতে কিছু পরিবর্তন আসে। যেখানে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির মিশ্রণ থাকে, যার দ্বারা অর্থ উদ্ধার করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায় যেমন কা, কে, কু।

চার মাস বয়সে শিশু হাসতে পারে। স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণের হারও বাড়তে থাকে। যখন তার বয়স ৫-৬ মাস হয়, তখন তার কথা বলার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি আসে। এ সময় অনেক কিছুই যেমন মা, বা, গা, দা এগুলো বলতে পারে শিশু।

কোনো কোনো ধ্বনি বারবার উচ্চারণ করে যেমন বা বা বা। ভাষা বিকাশের এই পর্যায়কে বলা হয় বাবলিং বা অস্পষ্ট ভাষা। এটি চলতে থাকে ৬-৮ মাস বয়স পর্যন্ত। ৮-১০ মাস বয়সী শিশুটি দাদা বাবা বলতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: হাই প্রেশারের গুরুতর যে লক্ষণ দেখা দেয় পায়ে 

প্রথম বছরের শেষের দিকে ও দ্বিতীয় বছরের প্রথম দিকে শিশুটি বাবা-মার ব্যবহৃত ভাষার বিভিন্ন শব্দ বলার চেষ্টা করে, এগুলোই স্বাভাবিক বিকাশের লক্ষণ। এ সময় শিশুটি চারপাশের পরিচিত মানুষের নাম বিভিন্ন জিনিসের নাম (চাঁদ, বল) অস্পষ্ট করে বলার চেষ্টা করে।

১৯-২৪ মাস বয়সের শিশুরা শব্দের বাক্য বলতে শুরু করে, এতে সাধারণত ক্রিয়াবাচক শব্দটি থাকে না যেমন মা পানি দাও না বলে শুধু মাম বা আম ইত্যাদি নানা ধরনের শব্দ উচ্চারণ করে।

টেলিগ্রাফ যন্ত্রে এরকম একটি দুটি শব্দ ব্যবহার করে তথ্য পাঠানো হয় বলে টেলিগ্রাফিক শব্দ বলা হয়। এ সময় তার শব্দ ভান্ডারে ৫০ টি মতো শব্দ থাকে এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন শব্দ শিখতে থাকে।

আরও পড়ুন: খালি পেটে চা পানের অভ্যাস হতে পারে মারাত্মক 

তিন বছরে শিশুটির সব কথাই বুঝতে পারে তার পরিবারের সদস্যরা। সে অর্থপূর্ণ বাক্য বলতে চেষ্টা করে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় বাক্য খুঁজে পায় না কিন্তু সে দ্রুত শিখে নেয়।

নাউন ও ভার্ব এর সমন্বয়ে পুরো একটি বাক্য বলার চেষ্টা করবে। কারও নাম জিজ্ঞেস করবে,যা দিয়ে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, এভাবেই সে কথা বলা শিখে যাবে।

যদি শিশু ১৮-২০ মাস পার হওয়ার পরও দিনে ১০ টির কম শব্দ বলে বা ২১-৩০ মাস বয়স হওয়ার পরও ৫০টিরও কম শব্দ বলে তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির ভাষার বিকাশের সমস্যা আছে।

আরও পড়ুন: ওষুধ ছাড়াই কিডনির পাথর গলানোর ঘরোয়া উপায় 

এক বছর বয়সী শিশুটি যদি ছোট বাক্য, অস্ফুট বাক্য না বলে, অন্যদের কথার সঙ্গে সঙ্গে তা অনুকরণ করার চেষ্টা না করে, প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তখন বুঝতে হবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ভাষার বিকাশের ধারাবাহিক ধাপগুলো ঠিকমতো শিশুটি অতিক্রম করছে কি না সেটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখবেন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: কনসালটেন্ট, নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল। প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।

জেএমএস/জিকেএস