ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বগুড়াবাসী। ভোর থেকে হাজার হাজার অটোরিকশার দখলে থাকে শহরের প্রতিটি সড়ক। জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে চলাচল করাই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
Advertisement
অবৈধ এসব যান বিক্রির বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে বগুড়ায়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এই বাজার থেকে প্রতিদিন শতাধিক রিকশা বিক্রিও হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবৈধ অটোরিকশায় ভরে গেছে জেলার অলিগলি ও মহাসড়ক। দ্রুতগতির এবং ফিটনেসবিহীন এ যন্ত্রদানব এখন রাস্তায় পথচলতি মানুষের কাছে আতঙ্কের অপর নাম।
আরও পড়ুন- যানজট নিরসনে রঙিন স্বপ্ন এখনো সাদাকালো
গত ছয় মাসে শুধু অটোরিকশা দুর্ঘটনায় জেলায় ১০ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। পৌরসভা ও ট্রাফিক পুলিশের খামখেয়ালিতে অবৈধ অটোরিকশা প্রতিটি সড়ককে করে তুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
Advertisement
বগুড়া শহরের গোহাইল রোডের মোস্তাফিজুর আগে মেশিনারি পার্টসের ব্যবসা করতেন। এখন তিনি অটোরিকশার দোকান খুলেছেন। একটি অটোরিকশা বিক্রি করলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়, দিনে গড়ে তিন-চারটি বিক্রি করেন তিনি। এই করে দৈনিক লাভ আসে তার ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, অন্য ব্যবসা কেন করবো? একটু ঝুঁকি থাকলেও এ ব্যবসাই ভালো।
এর আগে শহরের গোহাইল রোড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে ছিলো জিহাদ অটো সেন্টার, বিকল্প বাইক সেন্টার, শাহীন অটো হাউস, নিউ সেবা মোটরস, অটো হাউস, অটো পয়েন্ট ও বগুড়া অটো সেন্টার।
এখন সেই গোহাইল রোডে পুরানো দোকান চালু ছাড়াও আরও অর্ধশতাধিক দোকানে প্রকাশ্যে অবৈধ অটোরিকশা বিক্রি হয়। বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেন দেখেও দেখছেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে প্যাডেল রিকশায় শুধু একটি মোটর লাগিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে হালকা ধরনের ব্রেকেও বাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না চালকরা। আর পা দিয়ে প্যাডেল না করার কারণে আনকোরা চালকরা ইচ্ছামতো গতি বাড়িয়ে চলাচল করায় হঠাৎ ব্রেক কষতে গিয়েও ঘটছে বিপত্তি।
Advertisement
আরও পড়ুন- ৫ টাকায় মেলে সব রোগের চিকিৎসা
খবর নিয়ে জানা গেছে, এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার বেশিরভাগেরই ব্রেক দুর্বল। দ্রুতগতিতে চলার সময় সামনে কিছু পড়লে এই যানটিকে আর থামানো যায় না। উল্টে যায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এরপরও অনন্যোপায় হয়ে মানুষ এসব যানবাহনে চলাচল করে।
বগুড়া বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, পিকআওয়ারে এসব গাড়ি চার্জিংয়ের কারণে শহরে লোডশেডিং অনেক বেড়ে যায়। তারা সার্ভে করে দেখেছেন, অনেক গ্যারেজ রয়েছে যেখানে ভাড়ার বিনিময়ে রাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা রাখা যায়, আবার সেখানেই ওই রিকশাগুলোর ব্যাটারিও চার্জ করা হয়। একটি ব্যাটারিগাড়ি চার্জ করতে নেওয়া হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে ব্যাটারি চার্জড হতে। প্রতি রাতে শহরে এত সংখ্যক রিকশার ব্যাটারি চার্জড হয় যে তাতে বিদ্যুৎ সংকট দেখা না দিয়ে পারে না।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, শহরে এগুলো চললেও পৌরসভা কিংবা বিআরটিএ তাদের কোনো লাইসেন্স দেয়নি। যার কারণে এ যানটিকে পৌর কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি অবৈধ বলছে। তাদের হিসাব অনুসারে বগুড়া শহর ছাড়াও আশপাশের গ্রামাঞ্চলে এবং বিভিন্ন উপজেলায় এ ধরনের অর্ধলাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। প্রথম দিকে এসব গাড়ি আমদানি করা হলেও এখন সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদের লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে চলছে জটিলতা।
বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লাইসেন্সের অনুমোদন চেয়ে চিঠি লিখলেও মন্ত্রণালয় এসব যানবাহনকে লাইসেন্স দিতে নিষেধ করেছে। কারণ এ ধরনের যান সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এর কোনো ফিটনেস নেই। এছাড়া এই যানটি চলার জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন তাও সরকার দিতে পারবে না। এ যানটি যাতে কোনোভাবেই রেজিস্ট্রেশন কিংবা চলাচলের অনুমতি না পায় সে ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পৌরসভাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- আলুতে স্বপ্নভঙ্গ কৃষকের
পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, প্রথমে এ বাহনকে একটি নীতিমালার আওতায় আনার চিন্তা করা হয়েছিল। সেসময় প্রতিটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বাবদ দুই হাজার টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণেরও চিন্তা করা হয়। কিন্তু পরে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসে রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে।
এ বিষয়ে বগুড়া বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মইনুল হাসান জানান, এসব ব্যাটারিচালিত গাড়ি আগে আমদানি করা হলেও এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাহনগুলো অবৈধ, তাই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। এসব অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে পৌরসভা ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রয়োজনে বিআরটিএ তাদের সহযোগিতা করবে।
বগুড়া জেলার ট্রাফিক ফাঁড়িগুলোর ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান, অবৈধ এসব গাড়ি আমদানি বন্ধ হলেও আগেই অনেক বেশি পরিমাণ গাড়ি সড়কে নেমে গেছে। যার কারণে এসব সহজেই সরানো যাচ্ছে না। তবে প্রধান সড়কে এসব যানবাহন চলাচল করতে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এরপরও যত্রতত্র স্ট্যান্ড করে এসব যানবাহন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে শহরে যানজটও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এলে জোরালো পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।
এফএ/জিকেএস