ফিচার

ছোট্ট টি-ব্যাগ সাজিদের আঁকার ক্যানভাস

মুহাম্মদ শফিকুর রহমানশখে মানুষ কত কিছুই না করেন। কেউ ছবি আঁকেন, কেউবা বাগান করেন। শখ থেকে আয় ও হয় কারও কারও। তবে আয়ের চিন্তা নয়, বেশিরভাগ মানুষ মনের আনন্দের জন্য নানান কর্ম করে থাকেন। তেমনি মনের আনন্দে সৌখিন কাজে গিয়ে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছেন ওয়াসিম ইকবাল সাজিদ।

Advertisement

সাজিদ গ্রীন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর আইন অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্র। জন্ম কুষ্টিয়ায় হলেও পুলিশ বাবার চাকরির সুবাদে দেশের নানা জায়গায় থাকা হয়েছে সাজিদের। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাজিদ ছবি আকেঁন ছোটবেলা থেকেই। দাদার কাছে তার ছবি আঁকার শুরু। তার দাদাও খুব ভালো ছবি আঁকতেন। তবে আঁকার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই সাজিদের। তাতে কি? সৃজনশীলতা, ইচ্ছা এবং কাজের পেছনে লেগে থাকলে সফলতা তো আসবেই। সাজিদের বেলাতেও তা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ই-কমার্সে ঊর্মির ইচ্ছাপূরণ

ছোটবেলা থেকেই নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বিশেষ করে স্কুল এবং কলেজ চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন একাধিকবার। কলোনি অব আর্ট, প্রত্যুষ, কালচারাল ক্লাসিসিস্ট থেকে ২০২০ এবং ২০২১ সালে একাধিক ইভেন্টে পুরস্কার পেয়ছেন সাজিদ। ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেরা উদীয়মান চিত্রশিল্পী স্মারক সম্মান গ্রহণ করেন জনপ্রিয় লেখিকা সেলিনা হোসেনের হাত থেকে। একাধিক প্রদর্শনীতে তার ছবি স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত প্রদর্শনী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনী।

Advertisement

বাংলাদেশের প্রথম ই-অলিম্পিয়াতে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন সাজিদ। ২০২০ সালে করোনা চলাকালীন রবি টেন মিনিট স্কুলের কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পেইন বিজয়ীর তালিকার তার নাম ছিল। ছবি আঁকা প্রসঙ্গে সাজিদ বলেন, ভালো লাগে, আনন্দ পাই, তাই ছবি আঁকি। অন্যরা যেমন ছবি বিক্রির জন্য উঠেপড়ে লাগে। সাজিদ শিল্পকর্ম নিয়ে একদমই এমনটা করেন না। বিক্রি হলে ভালো। না হলেও তার একটুও আফসোস নেই।

সাজিদ বলেন, অনেক কাছের মানুষকে আমি ছবি উপহার দিয়েছি। ছবি আঁকার পাশপাশি সাজিদ ক্যালিগ্রাফিও করেন। তার ক্যালিগ্রাফি সমাদৃত হয়েছে সুধী মহলে। পাশাপাশি সাজিদ টি-ব্যাগে বেশ কিছু ছবি এঁকেছেন। ছোট্ট টি-ব্যাগের উপর আঁকেন খুব সাবলীলভাবে। যা সবার কাছেই প্রশংসিত হয়েছে। ছবি আঁকার পাশাপাশি বিদেশি পাখি পালনেও সাজিদ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে বাজরিগার, লাভ বার্ড, ককাটেইল পালন করছেন।

সাজিদ জানান, বাজরিগার পাখির এত বেশি বাচ্চা উৎপাদিত হয়েছে যে কিছু পাখি তিনি বিক্রি করেছেন। অনেককে পাখি উপহারও দিয়েছেন। শখের বসে সাজিদ বাগান করেন। সেখানে আছে চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া, বেলি, জবা এবং বিভিন্ন জাতের গোলাপ।

এসবের পাশাপাশি ফটোগ্রাফিতেও পটু সাজিদ। গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, পাখি, ফুলের ছবি তুলতে ভালোবাসেন। ফটোগ্রাফিও করেন শখের জায়গা থেকেই। তার তোলা ছবি দেশের একাধিক প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীতে জায়গা করে নিয়েছে। সাজিদের আরেকটি শখের কাজ হলো, বৈদেশিক মুদ্রা এবং পৌরাণিক মুদ্রা সংগ্রহ। এজন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে গেছেন। তবুও মুদ্রা সংগ্রহের শখ থেমে থাকেনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: সফল জুটি থেকে সফল উদ্যোক্তা

সাজিদ জানান, ক্লাস থ্রি থেকে মুদ্রা সংগ্রহ করেন তিনি। বাবার কাছ থেকে পাওয়া ভারতের একটি রুপি থেকে এই সংগ্রহের যাত্রা শুরু হয়। মুদ্রা সংগ্রহ বেশ উপভোগ করেন তিনি। বর্তমাসে সাজিদের সংগ্রহে আছে প্রায় ১২০টি দেশের টাকা এবং মুদ্রা। বাংলাদেশের তথা পূর্ব পাকিস্তানের মুদ্রা ছাড়াও প্রাচীন ভারতীয়, মুঘল শাসনামল, সুলতানি শাসনামল সহ মৌর্য শাসন ৩৭৫ খ্রিষ্ট পূর্ববাদের মুদ্রা ও ২০০০ বছর পুরোনো পুঁথি তার সংগ্রহ ভাণ্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ।

কীভাবে এই সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে সাজিদ জানান, অন্যান্য সংগ্রাহক, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্যে এসব টাকা এবং মুদ্রা সংগ্রহ করেন। সামাজিক মাধ্যমে নানান জায়গায় মুদ্রা থাকার সংবাদ জানতে পারেন। এরপর সেখান থেকেও কিছু কিছু মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি এত শখের কাজ। পড়াশোনার ক্ষতি হয় না? এর উত্তরে সাজিদ বলেন, শখের কাজ আমার লেখাপড়ায় কোনো বাজে প্রভাব ফেলে না। কারণ সব কাজের শেষে অবসরে আমি এসব কাজ করি। বরং শখের কাজ করলে মন প্রফুল্ল থাকে। একঘেয়েমি লাগে না কাজে। অনেক অনর্থক কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে এমন সব সৌখিন কাজ। এগুলো করতে যে লাখ লাখ টাকা লাগে। এমনও নয়। ইচ্ছে থাকাটাই আসল।

সাজিদ চান শখের কাজগুলোতে মানুষের লুকায়িত প্রতিভা জেগে উঠুক। সবার মধ্যে এই মনোভাব জেগে উঠুক। প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু শখ বিষয় থাকে এবং লুকায়িত প্রতিভা থাকে। শুধু উৎসাহ না পাওয়ায় এবং সুযোগের অভাবে এসব ঝরে পড়ে যায়। তাই আমাদের উচিত তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করা। সাজিদের শখের কাজে তার বাবা কখনো বাধা হননি। সব শখের কাজে বাবা, মার সমর্থন পেয়েছেন শুরু থেকেই। বরং কোথাও পুরস্কৃত হলে তাদের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। তারা খুব খুশি হন তার অর্জনে।

কেএসকে/জেআইএম