একাত্তর বছরেও ভাষা শহীদ আবদুস সালামের স্বজনদের আক্ষেপ পূর্ণ হয়নি। দীর্ঘ সময় পর আজিমপুর কবরস্থানে সালামের কবর চিহ্নিত হলেও সেটি সংরক্ষণ, ফেনীর দাগনভূঞা বাজারের জিরো পয়েন্টকে সালাম চত্বর নামকরণ, ঢাকা-ফেনী-দাগনভূঞায় একটি সড়ক সালামের নামে নামকরণ, চার লেনের মহাসড়কের পাশে সালামের বাড়ি নির্দেশক তোরণ নির্মাণ, ভাষা শহীদ সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামকরণ গেজেটভুক্ত করা স্বজনদের দাবি।
Advertisement
সালামের কবর সংরক্ষণ জরুরিভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পর ২০১৭ সালে শহীদ সালামের কবর শনাক্ত হয়। ঢাকার আজিমপুরে শায়িত আছেন এ ভাষা সৈনিক। ভাষা শহীদ সালামের ছোট ভাই আবদুল করিম ও ভাতিজা মকবুল আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার উজ্জামান, অঞ্চল-৩ এর সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার হাফিজুর রহমান এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের উপস্থিতিতে ২০১৭ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি কবর শনাক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলন
এ বিষয়ে আনসার উজ্জামান বলেন, ভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক শহীদ আবদুস সালামের কবর শনাক্ত করেছি। আজিমপুর কবরস্থানে তিনি শায়িত আছেন। ভাষা শহীদ সালামের ছোট ভাই আব্দুল করিম ও ভাতিজা মকবুল আহমেদ এসে কবর শনাক্ত করেন।
Advertisement
তিনি বলেন, ভাষা শহীদ আবদুস সালামের পরিবার এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শহীদ আব্দুস সালামের মৃত্যুর সনদ (শহীদ) গ্রহণের আবেদন করেছেন। তারা নিজেদের কাছে থাকা সব দলিল প্রমাণও জমা দিয়েছেন।
ভাষা শহীদ আবদুস সালামের ছোট ভাই আবদুল করিম জানান, পাঁচ বছর আগে আজিমপুর গোরস্থানে সালামের কবর চিহ্নিত করা হলেও এখনো পর্যন্ত কবরটি সংরক্ষণ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: মুজিব, ভাষা আন্দোলন ও গণমানুষের রাজনৈতিক সূচনা
গেজেটভুক্ত হয়নি সালামের নামে বিদ্যালয়ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। এর আগে স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে আব্দুস সালামের জন্মস্থান লক্ষ্মণপুর গ্রামের নাম সালামনগর করা হয়। তার স্মৃতি রক্ষায় সালামনগরে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর স্থাপন করা হয়।
Advertisement
ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ নুরজাহান বেগম জানান, নামকরণের পাঁচ বছর পার হলেও এখনো গেজেট প্রকাশ হয়নি।
ফেনী-মাইজদী মহাসড়কে তোরণ নির্মাণের দাবিভাষা শহীদ আব্দুস সালামের বাড়ির পাশ দিয়ে চলে গেছে ফেনী-দাগনভূঞা-মাইজদী চার লেনের মহাসড়ক। ২০ বছর আগে এলাকাবাসী সড়কের পাশে সালামের বাড়ি নির্দেশক সাইনবোর্ড লাগায়। সড়কটি চার লেনে সম্প্রসারণের সময় ওই সাইনবোর্ডটি ভেঙে যায় এরপর আর নির্মাণ হয়নি। এলাকাবাসীর দাবি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ভাষা শহীদ সালামের গ্রাম দেখতে আসে।ন কোনো নির্দেশক না থাকায় দূর দূরান্ত ঘুরতে হয় পর্যটকদের। ফেনী-মাইজদী মহাসড়কে সালাম নগর নির্দেশক তোরণ নির্মাণ দাবি এলাকাবাসীর।
আরও পড়ুন: ভাষা আন্দোলন-ছয় দফা অতঃপর বাংলাদেশ
নির্মাণ হয়নি ভাষা শহীদ সালাম অডিটরিয়ামপরিবার ও এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের নামে দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামটি ‘ভাষা শহীদ সালাম অডিটরিয়াম’ নামকরণ করা হয়। নামকরণের দুই বছরের মধ্যে পরিত্যক্ত হওয়ায় সেটি নিলামে বিক্রি করা হয়। ভেঙে ফেলার ১৪ বছরেও নির্মিত হয়নি অডিটোরিয়ামটি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা আক্তার তানিয়া জানান, উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানকার অডিটোরিয়ামটি সালামের নামে নামকরণ করা হবে।
নিষ্প্রাণ ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারনিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে ফেনীর ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ে কদর, শুরু হয় পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা। এছাড়া খবর রাখে না কেউ। তাই সালামের স্মরণে তার জন্মস্থানে আরও স্থাপনা তৈরির দাবি স্থানীয়দের। তাদের মতে এটিকে দৃষ্টিনন্দন করা গেলে প্রাণ ফিরে পাবে।
স্থানীয়রা জানান, সালামের স্মৃতি রক্ষায় দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ীতে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ হলেও। গ্রন্থাগারে রয়েছে সাড়ে তিন হাজার পুরোনো বই। আর জাদুঘরে ভাষা শহীদের একটি ছবি ছাড়া নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যান দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা।
ফেনী জেলা পরিষদ ও স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রামের নাম ‘সালাম নগর’ করা হয়। প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ সালামের বাড়ির অদূরে নির্মাণ করা হয় ‘ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। ২০০৮ সালের ২৬ মে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ।
আর ওপড়ুন: ‘ভাষা আন্দোলন জাতীয় মুক্তির অনন্য সোপান’
শহীদ সালামের ছোট ভাই সুবেদার (অব.) আবদুল করিম জানান, সালামের স্মৃতিচিহ্ন বলতে কিছুই নেই। রক্তমাখা শার্ট আর একটি ছবি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খাজা আহমদ নিয়ে আর ফেরত দেননি।
ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক শাহাদাত হোসাইন জানান, সালামের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তার কবরটি সংরক্ষণসহ স্বজনদের সব দাবি পূরণের দাবি করছি।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার তপন জানান, ২০২০ সালে সালাম স্মৃতি গ্রন্থাগারে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে স্থানীয় লুৎফর রহমান বাবলুকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আরএইচ/এএসএম