রাজনীতি

ভাষা আন্দোলনের চেতনা আ’লীগ বারবার হত্যা করেছে: মোশাররফ

ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আওয়ামী লীগ সরকার বারবার হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

Advertisement

তিনি বলেছেন, আমরা বাংলা ভাষা অর্জন করেছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা কীসের জন্য অর্জন করেছি, কী ছিলো এর চেতনায়? ছিলো গণতন্ত্র। আজকে স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও দেখি দেশে গণতন্ত্র নেই। আন্তর্জাতিক বিশ্বও বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ আলোচনার আয়োজন করে বিএনপি।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যিই যে, ভাষা আন্দোলনের চেতনা বলেন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলেন, গণতন্ত্র এদেশে বারবার হত্যা হয়েছে। প্রথম হত্যা হয়েছে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে এই আওয়ামী লীগ যখন স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় ছিলো তখন। তারা একদলীয় বাকশাল করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। আজকে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে ১৪ বছর ধরে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করছে।

Advertisement

তিনি বলেন, আজকে মানুষের ভোটের অধিকার নেই। শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও জনগণ ভোট দিতে পারে না। ভোট আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। এভাবেই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা আরও বলেন, ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ছিলো মাতৃভাষা রক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির চিন্তাধারাকে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে প্রকাশের স্বাধীনতা। আমি যা চিন্তা করি সেটা স্বাধীনভাবে বলতে না পারলে ভাষার কী তাৎপর্য আছে? ভাষা আন্দোলনের এটাও চেতনা ছিল, আমি আমার মাতৃভাষায় যেভাবে চিন্তা করবো, যেভাবে আমি স্বাধীনভাবে মুক্ত মনে চিন্তা করবো সেই স্বাধীন কথাটি বলার অধিকার আমার থাকবে। আজকে সেই কথা বলার অধিকারও নেই।

আওয়ামী লীগ মুক্তচিন্তা রুখতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বারবার হস্তক্ষেপ করেছে। প্রথম ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন নিউজ পেপারস সংশোধনী অ্যাক্ট করে সারাদেশে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে চারটি সংবাদপত্র চালু রেখেছিলো। সেদিন হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে টাইমস-দৈনিক বাংলা ট্রাস্ট্রের চারটি পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হলো। তারপর দেখলাম, ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিলো। ২০১৩ সালে দৈনিক আমার দেশ, একই বছর দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হলো।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার হটানোর ১০ দফা দাবির চলমান আন্দোলনকে সফল করতে জনগণকে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ।

Advertisement

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আজকে ভাষা দিবসে আমাদের শপথ হোক বর্তমান সরকারের পতন। রাজপথে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে যত শিগগির সম্ভব বর্তমান সরকারকে বিদায় করতে পারবো বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনারা দেখেছেন, বেশি কিছুদিন আগে আমেরিকায় একটি গণতান্ত্রিক কনভেনশন হয়েছিলো, আরেকটি গণতান্ত্রিক সম্মেলন হচ্ছে। দুবারই বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পাইনি। কেননা তারা পরিষ্কার বলেছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। যারা শাসন করছে তারা হাইব্রিড শোষক। এজন্য কিন্তু আমাদের ভাষাশহীদরা ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দেননি। তারা প্রাণ দিয়েছিলো, যুদ্ধ করেছিলো এদেশে স্বাধীনতাভাবে বেঁচে থাকা, অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তিনি আসতে পারেননি। মির্জা ফখরুল বর্তমানে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল হাই, কবি মাহবুব হাসান ও আ ন ম ফজলুল হক সৈকত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/এমকেআর/এএসএম