জাতীয়

সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না আনোয়ার

বহুতল ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। উত্তাপে একের পর এক এসির বিস্ফোরণ ঘটছে। ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আটকেপড়া বাসিন্দারা বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছেন। এরইমধ্যে কয়েকজন প্রাণ বাঁচাতে ভবন নিচে লাফিয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একজন আনোয়ার হোসেন (৩০)। তিনি ভবনের সাততলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। অন্যরা প্রাণে বাঁচলেও মারা গেছেন আনোয়ার।

Advertisement

ভোলার দৌলতখানের দিদারুল্লা গ্রামের মো. নুর ইসলামের ছেলে আনোয়ার। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। আনোয়ারের স্ত্রী আমেনা বেগম গ্রামে থাকেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। অগ্নিকাণ্ডে স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আমেনা। অনাগত সন্তানের মুখটাও যে দেখে যেতে পারলেন না তার স্বামী!

জানা গেছে, রোববার রাতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় আনোয়ারকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে প্রথমে তার নাম-পরিচয় জানা যাচ্ছিল না। টেলিভিশনে ভবনে আগুন লাগার খবর দেখে তার ভাই জুলহাস ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি ও তার বোন ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে রাত ২টার দিকে ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন: গুলশানের অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু

Advertisement

জুলহাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিভিতে আগুন লাগার খবর দেখে ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে জানতে পারি, আমার ভাই লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে আমি ও আমার বোন হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে ভাইকে আর জীবিত পাইনি। ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ভাই বিবিসির পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন। বাসার বাজার করতেন। ভাবি আমেনা বেগম গ্রামে আছেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের মুখও দেখে যেতে পারলেন না ভাই।’

আরও পড়ুন>> গুলশানের আগুনে মারা যাওয়া যুবকের পরিচয় শনাক্ত

ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন বিসিবির পরিচালক ফাহিম সিনহার স্ত্রী সায়মা রহমান সিনহাও। তিনি ১২তলার ছাদ থেকে লাফ দেন। নিচে সুইমিংপুলে পড়েন সায়মা রহমান সিনহা। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। সেখানে আরও চারজন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে আগুনের ঘটনায় আনোয়ার হোসেন ছাড়াও আরেকজন মারা গেছেন। তবে এখনো নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

Advertisement

রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটের দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ক্রমান্বয়ে ইউনিট বাড়ানো হয়।

আরও পড়ুন>> আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি

সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারে যোগ দেন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরাও। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুন লাগা ভবনের কয়েকটি ফ্লোর থেকে নারী শিশুসহ ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন ফায়ার ফাইটাররা।

এদিকে, সকালের দিকেও ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও ভবনের মালিক ভেতরে প্রবেশ করেন। পুড়ে যাওয়া ফ্ল্যাটগুলোতে উদ্ধারকাজ এখনো চলছে। তবে নিরাপত্তার কারণে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

টিটি/এএএইচ/জিকেএস