বিনা অপরাধে তিন সপ্তাহ ধরে হাজত খাটছেন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হাটবারেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিন নামের এক কৃষক। একটি ডাকাতি মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি ধরতে গিয়ে নামের মিল থাকায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে ওই দিনমজুরের মুক্তি দাবি জানিয়ে আসছেন গ্রামের লোকজন।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার পূর্বধলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিসমত বারেঙ্গা গ্রামের মৃত মিরাশ আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন (৩৫) প্রায় ১৭ বছর আগে সুনামগঞ্জে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে তিনি সুনামগগঞ্জের নৈগাং এলাকায় বিয়ে করে সেখানে অবস্থান করেন। ২০১৩ সালের ৪ মে সিলেটের জালালাবাদ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করা হয়।
গতবছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ওই মামলায় বিচারিক আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু রায় ঘোষণার সময় তিনি পলাতক ছিলেন। পরে আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ২৯ জানুয়ারি পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি টিম গ্রেফতার অভিযান চালায়। ওইসময় কিসমত বারেঙ্গা গ্রামের অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার না করে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাটবারেঙ্গা গ্রামের গ্রামের মৃত মিরাজ আলীর ছেলে দিনমজুর নাজিম উদ্দিনকে (৪৩) গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন থেকে বিনা অপরাধে সিলেট কারাগারে রয়েছেন নাজিম উদ্দিন।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হাটবারেঙ্গা গ্রামে নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। তিনি ওই পরিবারের সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলেন।
Advertisement
নাজিম উদ্দিনের বৃদ্ধ মা ছকিনা খাতুন, তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার, ছেলে আলমগীর বলেন, নাজিম উদ্দিন কখনো ভ্যান চালাতেন আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করতেন। তিনি জীবনে কখনো নেত্রকোনা জেলার বাইরে যাননি। পুলিশ যাচাই না করেই তাকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন তারা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন।
গোহালাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাটবারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হাসনাত জামান বলেন, নাজিম উদ্দিন একজন অতি সহজ-সরল ও দরিদ্র মানুষ। তিনি দিনমজুরি করে চলেন। তিনি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। তার নামে থানায় কোনো মামলা নেই। কিসমত বারেঙ্গা গ্রামের সাবেক বাসিন্দা প্রতারক নাজিম উদ্দিনের নামের সঙ্গে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আল আমিন হোসেন বলেন, ‘কোনো আসামিকে গ্রেফতার করার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা পুলিশের উচিত ছিল। যে কাজটি করা হয়েছে সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।’
জানতে চাইলে শ্যামগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন ও পূর্বধলা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ভোটার আইডিতে নাম মিল থাকায় হাটবারেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Advertisement
নেত্রকোনা পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে শুনেছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে নির্দোষ নাজিম উদ্দিনকে মুক্ত করতে সব ধরনের আইনি সহায়তা করা হবে। পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এইচ এম কামাল/এসআর