আচ্ছা, কেউ যদি শুধু আপনার হাতের লেখা দেখেই বলে দিতে পারে মানুষ হিসেবে আপনি কেমন, আপনি কি রকম চিন্তাধারার অধিকারী, বা এক কথায় কেউ যদি কেবলমাত্র আপনার হাতের লেখা দেখেই বলে দেয় আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আপনি কি অবাক হবেন?
Advertisement
ব্যাপারটিকে কি অলৌকিক কিছু মনে হবে আপনার কাছে? পূর্বে আপনি যদি গ্রাফোলজি শব্দটার সঙ্গে পরিচিত না হয়ে থাকেন, স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়টি আপনার কাছে আশ্চর্যজনক লাগবে। আপনি ভাববেন, এ-ও কি সম্ভব নাকি, যে হাতের লেখা দেখে মন পড়ে নিচ্ছে!
হ্যাঁ, এটা কেবল সম্ভবই নয়, গ্রাফোলজির হাত ধরে যুগের পর যুগ এ বিষয়টি রীতিমতো চর্চিত হয়েও আসছে। গ্রাফোলজি এমন এক বিদ্যা যা আপনাকে শেখাবে কিভাবে একজনের হাতের লেখা বা স্বাক্ষর দেখেই আপনি অনায়াসে সুষ্পষ্ট ধারণা পাবেন সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বা আচরণ সম্পর্কে।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের হাতের লেখার ধরণ এবং গড়ন যেহেতু আলাদা আর বৈচিত্রময়, গ্রাফোলজিস্টরা খুব সহজেই সেই সব ধরণ, গড়ন দেখে পড়ে নিতে পারেন একজন মানুষের মনের অবস্থা। এই গ্রাফোলজি বিষয়টির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কিভাবে মানুষ আবেগ, অনুভূতি আর চিন্তাধারা তার স্বাক্ষর বা সার্বিক অর্থে হাতের লেখার মাধ্যমে নিজের অগোচরেই প্রকাশ করে ফেলেন।
Advertisement
কেননা, গ্রাফোলজি আপনার হাতের লেখায় প্রতিটি আলাদা আলাদা বর্ণ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে। শুধু তাই-ই নয়, স্বাক্ষর দ্বারাও আপনার মনে কি চলছে অন্যকে তার ধারণা জোগায় এই বিদ্যা।
আপনার হাতের লেখায় যদি অক্ষরগুলো বেশ খানিকটা আলাদা আলাদা হয়ে থাকে তবে গ্রাফোলজি বলছে আপনি নির্ঘাত কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ। আবার আপনার হাতের লেখা যদি ডান দিকে হেলানো হয়, তবে মানুষ হিসেবে আপনি খুবই বন্ধুবাৎসল একজন ব্যক্তি। ডানদিকে হেলানো এবং উল্লম্ব ধরনের হাতের লেখার ক্ষেত্রে এই শাস্ত্র বলছে আপনি স্বাধীনচেতা গোছের কেউ।
আপনার হাতের লেখা যদি বাঁ দিকে হেলানো হয় তবে আপনি খুবই আবেগপ্রবণ সাথে কিছুটা গুরুগম্ভীরও বটে। হাতের লেখা বড় হলে গ্রাফোলজি বলছে আপনি একজন এক্সট্রোভার্ট এবং আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে আপনার হাতের লেখা ছোট হলে তা নির্দেশ করে আপনি ইন্ট্রোভার্ট এবং চিন্তাশীল।
শুধুমাত্র হাতের লেখা কোনদিকে হেলানো, ছোট কি বড় তার ওপর নির্ভর করেই নয়, গ্রাফোলজিমতে, যে পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করে আপনি লিখছেন তার ওপর ভিত্তি করেও আপনার আচরণ বা ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। যখন কোনো ব্যক্তি কলমে বেশি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে লেখেন, তখন বোঝা যায় সেই ব্যক্তিটি আসলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সজাগ।
Advertisement
কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি কলমে গভীরভাবে বা অত্যধিক চাপে লেখেন তবে তখন সেই ব্যক্তিটির প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবই ফুটে ওঠে। আবার যখন কেউ কলমে আলতো চাপ প্রয়োগ করে লিখছেন তখন বোঝা যাবে সে খুবই সংবেদনশীল একজন মানুষ। কখনও কখনও কলমে ব্যক্তির অসম চাপ নির্দেশ করতে পারে তার জীবনীশক্তির অভাবকেই।
শুধু কি তাই? এই বিদ্যা কখনও আপনাকে না দেখেই ধারণা দেবে আপনার পেশা সম্বন্ধে। আপনি যদি একজন বিজ্ঞানী হন, তাহলে তার ছাপ নাকি আপনি নিজের অগোচরেই রেখে চলেছেন আপনার স্বাক্ষরে! কেননা গ্রাফলজিস্টরা দাবি করেন, একজন বিজ্ঞানীর স্বাক্ষর হয় খুবই পরিপাটি এবং সুশৃঙ্খল ধরনের। আবার নর্তকীদের হাতের লেখায় গ্রাফোলজিস্টরা খুঁজে পেয়েছেন নাচের মুদ্রার ঢেউ খেলানো ভঙ্গিমা। যে ব্যক্তিটি পার্থিব জীবনে প্রচন্ড অগোছালো, গ্রাফোলজি মতে তার হাতের লেখার মাঝেও থাকে এরকমই ঘিঞ্জী আর ঘষামাজা স্বভাব।
সে যাইহোক, বৈজ্ঞানিকভাবে অনেকেই গ্রাফোলজিকে স্বীকৃতি দিতে চান না। আবার এর দ্বারা যাচাইকৃত ফলাফল সবসময় সঠিকও হয় না। তবুও কিন্তু আপনি গ্রাফোলজিকে আপনার জীবন থেকে একবারে বাদ দিতে পারবেন না। সেই ৩০০০ বছর আগে চীনে জন্ম নেওয়া এই বিদ্যা এখন অবধি বিভিন্ন চাকরির ইন্টারভিউতে, নেতৃত্ব বা ব্যক্তিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। কারণ জীবনের অনেক ক্ষেত্রে আপনাকে যাচাই করা হতে পারে আপনার হাতের লেখার মাধ্যমে।
এমআরএম/এমএস