ফিচার

সফল জুটি থেকে সফল উদ্যোক্তা

মোছা. জান্নাতী বেগমসফল জুটি থেকে সফল উদ্যোক্তা। এ কোনো গল্প নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা দুজন তরুণ-তরুণী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থীর মো. রেজুয়ান রহমান রমি ও ফাওজিয়া খান সফল জুটি। সেই সঙ্গে হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। একই বিভাগ হওয়ায় পরিচয়টা ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর কথা-বার্তা, বন্ধুত্ব, এরপর প্রেম আসে তাদের জীবনে। প্রেমের শুরুটা ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ।

Advertisement

তাদের ব্যবসার শুরুটাও হয় ২০১৮ সাল থেকেই। মূলত ‘কাঠের পুতুল’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছিল অনলাইনে টি-শার্ট বিক্রির জন্য। মাত্র ৫ হাজার টাকার টি-শার্ট এনে ব্যবসা শুরু করেন তারা। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রায় পুরোটাই লস হয়। রমি এবং রাইসা দুজনেই পরবর্তীতে সতর্ক হয়ে যান। ব্যবসায় অগ্রসর হওয়ার জন্য দুজনেই সঠিক পরিকল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু ২০২০ সালে করোনায় সবকিছু লকডাউন হলে দুজনকেই নিজ নিজ বাসায় চলে যেতে হয়। তবে তখনো তারা থেমে থাকেননি। রমির বাড়ি টাঙ্গাইলে হওয়ায় সেখানকার তৈরি শাড়ি নিয়ে কাজ করার কথা তাদের দুজনেরই মাথায় আসে। রাইসার ইচ্ছাতেই পুনরায় এটা নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। নতুনভাবে ‘কাঠের পুতুল’-এর যাত্রা শুরু হয়।

আরও পড়ুন: মাত্র আড়াই বছরে সফল ক্যালিগ্রাফার জিহাদ

কাঠের পুতুল বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে, যেটি কালের আধুনিকতায় প্রায় বিলুপ্ত। তাদের কাজের মাধ্যমে এই বিলুপ্ত সাংস্কৃতিক উপকরণকে পরবর্তী প্রজন্মকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্যই ‘কাঠেরপুতুল’ নাম দেন পেজের। ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে রমি বলেন, ‘আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল ব্যবসা করার। আসলে কিছু বিষয় আছে যা আপনাকে টানবে, বিজনেসটাও আমাকে এভাবেই টেনে নিয়ে গেছে। এছাড়া রাইসার প্রথম থেকে সাপোর্ট ছিল, ওর আইডিয়াতেই শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই যখন দেখতাম বন্ধু-বান্ধবরা টিউশনি করাচ্ছে তখন আমারও ওদের মতো নিজের ইনকাম করার খুব ইচ্ছে জাগত এবং এটা হবে আমার একান্ত নিজের উদ্যোগে ভিন্ন কিছু’।

Advertisement

রাইসা জানান, ব্যবসার শুরুতে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসতে শুরু করে। সবকিছু ভালোভাবে পরিচিত না থাকার কারণে শাড়ি কালেকশন এবং ডেলিভারি দিতে বিভিন্ন সমস্যা হতো। আশেপাশের অনেকই শুরুতে ঠাট্টা তামাশা করতো। কিন্তু পরবর্তীতে তারাই আবার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে এসেছে তাদের কাছে।

তিনি আরও জানান, বন্ধুরা সব সময় তাদের পাশে থেকেছে। বিশেষ করে শিক্ষকরা সবসময় সাপোর্ট করেছে তাদের। পাশাপাশি পরিবারের মানুষদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন রমি-রাইসা। ২০২১ সালের ১৭ জুন বিয়ে করেন রমি-রাইসা দম্পতি। শুরুতে দুজনের পরিবার থেকেই কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। পরবর্তীতে তাদের দুজনের দৃঢ় মনোবল এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের প্রেম পূর্ণতা পায়।

বর্তমানে অনলাইন ডেলিভারি ছাড়াও ক্যাম্পাসে তাদের একটি আউটলেট রয়েছে, যেটার যাত্রা শুরু ২০২১ সালের মার্চে। তখন লকডাউন থাকার কারণে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর থেকে কাঠের পুতুলের প্রথম আউটলেট ওপেন করা হয়েছে। কাঠের পুতুলের আউটলেটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেইট সংলগ্ন রাস্তার পাশে অবস্থিত। বর্তমানে অনলাইন এবং অফলাইন মিলিয়ে তাদের প্রতিমাসে আর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ইনকাম হয়। যার মধ্যে অনলাইনেই বেশি টাকা উপার্জিত হয়। বিভিন্ন উৎসবের মৌসুমে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।

ভবিষ্যতে তারা বিভাগীয় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ এ একটি আধুনিক আউটলেট চালু করতে চান। পাশাপাশি অনলাইন পেজটাকে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা রমি-রাইসা জুটির।

Advertisement

কেএসকে/এমএস