প্রথমেই অভিনন্দন বাংলাদেশ দলকে। শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে অসাধারণ একটি জয় উপহার দেয়ার জন্য। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত খেলেছে মাশরাফি বাহিনী। নিঃসন্দেহে দিনের সেরা দল ছিল বাংলাদেশ। সর্বক্ষেত্রেই শ্রীলঙ্কার ওপর আধিপত্য দেখাতে পেরেছে তারা। সুতরাং, জয়টা তাদেরই প্রাপ্য ছিল।গতকালই লিখেছিলাম, উইকেট যেভাবে চায় সেভাবে যদি পরিকল্পনা করে ব্যাট করতে পারে এবং বোলিংয়েও যদি আরব আমিরাতের বিপক্ষে যেটা করতে পেরেছিল, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে তাহলে জয় পাওয়াটা খুব সম্ভব। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তবে বোলিংয়ের ওপর আস্থা ছিল। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং-বোলিং দুটোই অসাধারণ হয়েছে বাংরাদেশের।টি-টোয়েন্টি মাত্র ১২০ বলের খেলা। এখানে শক্তিধর দেশ বলতে কিছুই নেই। এই ফরম্যাটে টপ টিম আর মোটামুটি টিমও সমান হয়ে যায়। এই ১২০ বলের খেলায় যে যতো সুন্দর পরিকল্পনা করে খেলতে পারবে এবং পরিস্থিতি কাজে লাগাতে পারবে, তারই সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও আজকে বাংলাদেশ নিজেদের পরিকল্পনা শতভাগ না হোক অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। এ কারণেই জয়টা এলো। আমি মনে করি, এটা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসেরই একটা ফল। বাংলাদেশের এই দলটি মনে করে, যেকোনো দলের বিপক্ষে জেতা সম্ভব। এই যে আত্মবিশ্বাস দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের মধ্যে, সেটা এখন একটা বড় সম্পদ। আর এই সম্পদই বাংলাদেশ দলকে সাফল্য এনে দিচ্ছে বার বার।শুরুতে পরপর দুই উইকেট এবং ২৬ রানের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলের ভেতর এই মানসিকতা তৈরি হওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল যে, যেকোনো পর্যায়ে, যেকোনো অবস্থানে হাল ধরা যায় এবং জয়ের জন্য খেলা যায়। শুরুতেই ভেঙে গেলে পুরো দলের মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায় না।২৬ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সাব্বির রহমান যেভাবে খেলেছে, তা সত্যিই অসাধারণ। সাব্বিরের এই ব্যাটিংই শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিল। বিপিএলেও সে খুব একটা ফর্মে ছিল না। শেষের দিকে ২-১টা ম্যাচে ভালো করেছে। এরপর থেকেই কিন্তু সে ধারাবাহিক। আজও দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সে যেভাবে খেলেছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। প্রথমে খুব দেখে-শুনে ব্যাট করার পর পরিস্থিতি বুঝে হাত খুলেছে। দলের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন ছিল। ক্রিজে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।সবচেয়ে বড় কথা হলো উইকেট যেমন চেয়েছে সেভাবে ব্যাটিং করতে পেরেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আর বোলিংয়ে গিয়ে উইকেটের পুরোপুরি সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে সাকিবের ফর্মে ফেরা। তার ফর্মে ফেরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে যে জায়গায় ব্যাটিং করে, সেখানে একটা গ্যাপ হয়ে যাচ্ছিল। সে ফর্মে ফেরায় গ্যাপটা আর থাকলো না। শুধু ব্যাট হাতে কেন, বল হাতেও তো নিজেকে প্রমাণ করেছে আজ সাকিব।বাংলাদেশ যে বড় দল হয়ে উঠছে তারও একটা লক্ষ্মণ দেখা গেলো আজ। তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়া পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটা হচ্ছে একটা ভালো দলের লক্ষ্মণ, যে পিছিয়ে থাকারও পরও কীভাবে ফিরে আসা যায়, সেটা দেখিয়েছে তারা। প্রথম দিকে ওভাবে তিনটি উইকেট পড়ে না গেলে, আরও ১৫ রান বেশিও হতে পারতো। তবুও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। এরপর বোলিংয়ে ভালো বল করেছে। জয়ের মূল মন্ত্রই আসলে এটা।অনেককে ফিল্ডিং নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে দেখেছি। আমি হতাশ নই। ম্যাচে ২-১টা ক্যাচ পড়েছে এটা ঠিক। তবে এই দলটি অনেক পেশাদার। ক্যাচগুলো মিস হওয়ার কারণে ভেঙে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা রয়েছে। ক্যাচ মিস করলেও অন্যক্ষেত্রগুলোতে নিজেদের পুরোপুরি উজাড় করে দিয়েছে ক্রিকেটাররা। নিজেকে উজাড় করে দেয়া এবং জয়ের জন্য প্রচ- আত্মবিশ্বাসই বাংলাদেশের সাফল্যের মূল কারণ।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনারআইএইচএস/বিএ
Advertisement