কলকাতার জানবাজারের বাসিন্দা প্রসিদ্ধ মানবদরদি জমিদার। তিনি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠাত্রী এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৭৯৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হালিশহরের কোনা গ্রামে জন্ম রানি রাসমণির।
Advertisement
মাত্র ১১ বছর বয়সে কলকাতার জানবাজারের ধনী জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। তাদের চার কন্যা- পদ্মমনি,কুমারী,করুণাময়ী, জগদম্বা। পদ্মমণির স্বামী রামচন্দ্র দাস, কুমারীর স্বামী প্যারিমোহন চৌধুরী,করুণার বিয়ে হয় মথুরবাবুর সঙ্গে, বিয়ের কয়েক বছর পর করুণার মৃত্যু হয় মথুরমোহন বিশ্বাস তখন জগদম্বা কে বিয়ে করেন। ১৮৩৬ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর রানি রাসমণি স্বহস্তে তার জমিদারির ভার তুলে নেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা পরিচালনা করতে থাকেন। ব্যক্তিগত জীবনে রানি রাসমণি এক সাধারণ ধার্মিক বাঙালি হিন্দু বিধবার মতোই সরল জীবনযাপন করতেন।
রানি রাসমণি তার বিবিধ জনহিতৈষী কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে সুবর্ণরেখা নদী থেকে পুরী পর্যন্ত একটি সড়ক পথ নির্মাণ করেন। কলকাতার অধিবাসীদের গঙ্গাস্নানের সুবিধার জন্য তিনি কলকাতার বিখ্যাত বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট ও নিমতলা ঘাট নির্মাণ করেন। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি (অধুনা ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগার) ও হিন্দু কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠাকালে তিনি অর্থসাহায্য করেছিলেন।
একবার ইংরেজ সরকার গঙ্গায় জেলেদের মাছ ধরার উপর জলকর আরোপ করে। নিরুপায় হয়ে জেলেরা রানি রাসমণির কাছে গেলে রানি রাসমণি ইংরেজ সরকারকে ১০ হাজার টাকা কর দিয়ে ঘুসুড়ি থেকে মোটিয়াবুরুজ এলাকার সমস্ত গঙ্গা জমা নেন এবং লোহার শিকল টানিয়ে জাহাজ ও নৌকো চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে ইংরেজ সরকার আপত্তি করলে রাসমণি বলেন যে, জাহাজ চলাচল করলে মাছ অন্য জায়গায় চলে যাবে ফলে জেলেদের ক্ষতি হবে। এই অবস্থায় ইংরেজ সরকার রানি রাসমণির ১০ হাজার টাকা ফেরত দেয় এবং জলকর তুলে নেয়।
Advertisement
একবার এক নীলকর সাহেব মকিমপুর পরগনায় প্রজাদের ওপর উৎপীড়ন শুরু করলে রানি রাসমণি তা বন্ধ করেন। তিনি ১ লাখ টাকা খরচ করে স্টোনার খাল খনন করেন। এতে মধুমতী নদীর সঙ্গে নবগঙ্গার সংযোগ ঘটে। সোনাই, বেলিয়াঘাটা ও ভবানীপুরে তিনি বাজার স্থাপন করেন।
ধর্মচর্চার জন্য দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির তিনিই নির্মাণ করেন। রানি রাসমণির জানবাজারের বাড়ির দুর্গাপুজো কলকাতার বিখ্যাত পুজো। মহালয়ার পর প্রতিপদ থেকেই পূজার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় এখানে। এছাড়াও বিভিন্ন জনহিতৈষী কাজ করেছেন। ১৮৬১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
কেএসকে/এমএস
Advertisement