ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা অন্তরার নেতৃত্বে এক নবীন শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের অভ্যন্তরে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। কিন্তু আসলে ওই রাতে কী ঘটেছিল?
Advertisement
গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগী ক্যাম্পাস ছাড়লে এ বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে সেই রাতের ভয়াবহ চিত্র।
ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই রাতে গণরুমে অবস্থান করা এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করে বলেন, রাতে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমের একটি কক্ষে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও চড় থাপ্পড় মারা হয়। ভুক্তভোগী যা বর্ণনা দিয়েছে, তার চেয়েও বেশি নির্যাতন করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যদিও যে রুমে নির্যাতন করা হয় তার পাশের রুমে ছিলাম। তবে, একটি দেওয়ালের ওপর এক হাত পরিমাণ ফাঁকা থাকায় সেখান দিয়ে সব কথা ও শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ওই শিক্ষার্থীকে বেশ জোরে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। আমরা ওর কান্না ও আকুতির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।
Advertisement
গণরুমে থাকা ওই ছাত্রী আরও বলেন, ওর ওপর নির্যাতনের শব্দ আমাদের রুমের অনেকেই সহ্য করতে পারছিল না। তারা অন্য সাইডে চলে যায়। আমরা কয়েকজন নিঃশব্দে কান্না করতে থাকি। পরে বাইরে গিয়েও বসেছিলাম কিছুক্ষণ। রাত ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত রুমে নির্যাতনের পর একজন বলে রুমের বাইরে নিয়ে যেতে, তখন ওকে ডাইনিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পাশের রুমে অবস্থানকারী আরেক আবাসিক ছাত্রী বলেন, নির্যাতনকারীদর মধ্যে একজন পাশের বাকি তিনটা গণরুমের সবাইকে হুমকি দিয়ে বলেন, কেউ যদি রুমের বাইরে বের হয়, তার খবর আছে। আমাদের ওয়াশরুমেও যেতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে তারা ওই ছাত্রীকে প্রভোস্ট স্যারের বিরুদ্ধে গালাগালি দিতে বলে এবং ভিডিও করে। এমন নির্যাতন রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলতে থাকে। পরে কলা অনুষদের এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা থাকায় সে চিৎকার করে উঠলে নির্যাতনকারীরা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যায়।
গণরুমের ছাত্রীদের ভাষ্যমতে, নির্যাতনকারীদের মধ্যে ফাইন আর্টস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন উর্মী, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মীম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাওয়াবিয়াসহ কয়েকজন ছিলেন।
তবে এ বিষয় মীম বলেন, আমি ওই সময় ওখানে ছিলাম না। আমার রুমেই ছিলাম। আমি কেবল অন্তরা আপুর নির্দেশে ওকে দোয়েল রুমে রেখে চলে আসি।
Advertisement
এদিকে, হলের সাবেক এক আবাসিক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার বিষয়ে বলেন, আমার পাশেই অন্তরা থাকতো। ও বেশ শান্ত স্বভাবের ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পদ পাওয়ার পর থেকেই তার দৌরাত্ম ও ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। সবাইকে তার কথা শোনাতে বা বাধ্যগত করতে উঠেপড়ে লাগে সে।
প্রসঙ্গত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বুধবার হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার অভিযুক্তরা হল ছাড়েন।
রুমি নোমান/এমআরআর/জেআইএম