আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ এর মাধ্যমে দেশের ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির পথে যাত্রাকে ত্বরান্বিত করার উপযুক্ত সময় বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
Advertisement
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এ তথ্য জানান।
প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। এ উপলক্ষে আগামী মার্চ মাসে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’, ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩’ এবং ’বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজন করতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই।
জসিম উদ্দিন জানান, ১১-১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী এ সামিটের উদ্বোধন করবেন।
Advertisement
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে এ সামিট বিশেষ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ সামিট আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক, নীতিনির্ধারক, বাজার বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরতে এ আয়োজন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন>>বাংলাদেশ বিজনেস সামিট মার্চে
মো. জসিম উদ্দিন জানান, দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা, বাধা এবং উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক এবং নীতিনির্ধারকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ৩টি প্ল্যানারি সেশন, ১৩টি প্যারালাল সেশন, উন্মুক্ত আলোচনা, বিটুবি মিটিং, নেটওয়ার্কিং সেশন।
তিনি বলেন, এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের ১২ থেকে ১৫টি দেশের মন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি। পাশাপাশি কয়েকটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ডব্লিউটিও’র মহাপরিচালক এবং ইইউর ট্রেড কমিশনারকেও আনার চেষ্টা চলছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহৎ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কেন না, টেকসই শিল্পায়নের লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে সরকার ‘বিজনেস ফ্যাসিলিটেশন’কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। সুতরাং এখনই সময় বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার। এখনই সময় আমাদের ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির পথে যাত্রাকে ত্বরান্বিত করা।
Advertisement
সামিটের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘সিএনএন এক্সপেরিয়েন্স’, যার মাধ্যমে বিখ্যাত টিভি চ্যানেল ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক-সিএনএন দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ, বিনিয়োগের সুযোগ এবং ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের ওপর প্রচারণা চালাবে। সামিটে সিএনএন’র বিজনেস এডিটর-অ্যাট-লার্জ রিচার্ড কোয়েস্টের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন>>ঢাকায় বিজনেস সামিটে অংশ নেবেন সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সহযোগিতায় এ সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ আয়োজনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিডাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে আমরা দারুণ সাড়া পেয়েছি। তারাও আমাদের সহযোগিতার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ এখন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলমান। বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি কাজ করছে তারা ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করেছে। এজন্য তারা আরও বেশি বেশি বিনিয়োগ করছে। তাছাড়া আমাদের দেশীয় বাজার অনেক বড়। সুতরাং সময় এসেছে এখন বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার।
বাংলাদেশ বিজনেস সামিটকে সফল ও স্বার্থক করতে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চান এফবিসিসিআই সভাপতি। এ আয়োজন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করবে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, বাংলাদেশে উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলোকে সামিটে উপস্থাপন করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে ‘বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে।
‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩’: এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, বাংলাদেশে উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলোকে তুলে ধরার জন্য বিজনেস সামিটের পাশাপাশি ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’ আয়োজন করতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে তুলে ধরা হবে এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে। এতে টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাবার, চামড়া, সিরামিক, পাট এবং হস্তশিল্পসহ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বিভিন্ন সেক্টরের পণ্য এবং পরিষেবা প্রদর্শন করা হবে। বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচার, বাংলাদেশি পণ্য ও পরিষেবার প্রচার, এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলির জন্য ব্যবসার সুযোগ তৈরিতে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড: দেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য উদ্যোক্তাদের সম্মানিত করতে এবার ‘বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ এর ব্যবস্থা করেছে এফবিসিসিআই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অসামান্য স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হবে। বিশেষ এ সম্মাননার জন্য অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে বিশেষ জুরি বোর্ড গঠন করেছি। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমি মনে করি, এই উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের দেশ বিনির্মাণে আরও উৎসাহিত করবে।
সামিটে অংশ নিতে ব্যবসায়ীসহ আগ্রহী সবাইকে (bdbusinesssummit.com) ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, মো. আমিন হেলালী, সালাউদ্দিন আলমগীর, হাবীব উল্লাহ ডন, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা ড. এম. মাশরুর রিয়াজ, এফবিসিসিআই পরিচালক, মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইএআর/ইএ/জেআইএম